রায়পুরায় দুই পক্ষের টেঁটাযুদ্ধে শিশুসহ আহত ৬

টেঁটাবিদ্ধ নীলু মিয়া (৪৫)। রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তোলা ছবি
সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের টেঁটাযুদ্ধে এক শিশুসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের আবদুল্লাপুর গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি।

আহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের আবদুল্লাপুর গ্রামের মো. শাহাদৎ (১৮), মো. জাকির মিয়া (৪০), জীবন মিয়া (২০), জুনায়েদ (৯) ও নীলু মিয়া (৪৫)। তাঁদের প্রথমে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রথম চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহত ব্যক্তিকে সরাসরি ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ১৩ মে দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে ওই এলাকার নুরুল হক (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। টেঁটাযুদ্ধের সময় এলাকায় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে তা দেখার জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবদুল্লাপুর গ্রামের ফরহাদ হোসেন ওরফে স্বপন ও মো. কাঞ্চন মিয়ার বিরোধ দীর্ঘ দিনের। কিছুদিন পরপরই এই দুই পক্ষ টেঁটা, বল্লম, দা, ছুরি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই দিন ধরেই এই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এই দুই দিনে বেশ কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

আজ বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করেই দুই পক্ষের লোকজন টেঁটা, বল্লম, দা, ছুরি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের ছোড়া টেঁটায় মোট ছয়জন ব্যক্তি আহত হন। পরে আশপাশের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, দুই পক্ষের লোকজনই গতকাল স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কথা দিয়েছিলেন, সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু আজ বেলা ১১টার দিকে তুচ্ছ ঘটনায় দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই ঘণ্টার এই টেঁটাযুদ্ধের ঘটনায় ফরহাদ হোসেন গ্রুপের পাঁচজন ও কাঞ্চন গ্রুপের একজন আহত হন।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে ফরহাদ হোসেন ও কাঞ্চন মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০ মাস আগে ফরহাদ হোসেন গ্রুপের সমর্থকেরা কাঞ্চন মিয়ার ওপর হামলা করেন। মাথায় কোপ দেওয়াসহ তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হন। এর প্রতিশোধ নিতে গত এপ্রিলের শেষ দিকে তাঁর লোকজন ফরহাদ হোসেনের কর্মী–সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা, আগুন দেওয়াসহ টেঁটাযুদ্ধে লিপ্ত হন।

এরপর গত ১৩ মে সকালে দুটি পক্ষ টেঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ আবার তারা টেঁটাযুদ্ধে লিপ্ত হয়।

চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান, ‘ফরহাদ হোসেন ও মো. কাঞ্চন মিয়া দুজনেরই দলীয় কোনো পদ না থাকলেও তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ ও টেঁটাযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় দুই পক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। আমরা বেশ কয়েকবারই দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি কিন্তু এতে কোনো পক্ষেরই আগ্রহ দেখতে পাইনি।’

এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, খবর পেয়ে রায়পুরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় ফরহাদ হোসেন স্বপন গ্রুপের পাঁচজন ও মো. কাঞ্চন মিয়া গ্রুপের একজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।