চুলা একটি। জ্বালামুখ কয়েকটি। সবকটি মুখেই বসানো মাটির তাওয়া। তাতে তৈরি হচ্ছে চিতই, ভাপাসহ নানা পিঠা। ততক্ষণে চুলার চারপাশে জমেছে ভিড়। ক্রেতাদের কারও চাহিদা ৫-১০টি পিঠা। কেউ কাগজের ঠোঙায় মুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। গরমাগরম মুখে পুড়ছেন কেউ।
শীতের শুরুতেই মৌসুমি পিঠা বিক্রির এ চেনা দৃশ্য দিনাজপুর জেলা শহরের। এবারও অলিগলিতে বসেছে পিঠার দোকান। এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন নানা শ্রেণির পিঠাপ্রেমিক ব্যক্তিরা। ভোর থেকে সকাল ৯টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলছে দোকানগুলো।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এবার ৭০-৮০টি জায়গায় পিঠার দোকান বসেছে। এর মধ্যে কালীতলা, বটতলী, মুন্সিপাড়া, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন চত্বর, কাঞ্চন কলোনি, নিউটাউন এবং অন্ধ হাফেজ, মডার্ন, জেল, পুলহাট ন্যাকার, রামনগর ও ডায়াবেটিক মোড় এলাকায় পিঠাপ্রেমীদের ভিড় বেশি।
পিঠার দোকানিরা জানালেন, ভাপা, চিতইসহ হরেক রকম পিঠা তৈরি করছেন তাঁরা। পিঠার স্বাদ বাড়াতে দোকানে রয়েছে ঝুরঝুরে গুড়, শর্ষেবাটা ও মরিচ, শুঁটকি, ধনেপাতাসহ মুখরোচক নানা ভর্তা। তবে এবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিমচিতই পিঠা।
ডিমচিতই তৈরির প্রক্রিয়াও জানালেন এক প্রস্তুতকারক। তিনি বলেন, চালের গুঁড়ার সঙ্গে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে দু-এক চিমটি লবণ দিয়ে তৈরি করতে হয় চিতইয়ের ঘোল। এই ঘোল গরম তাওয়ায় ছেড়ে দিয়ে, তার ওপর ভেঙে দিতে হয় আস্ত ডিম। মিনিট চারেক পর খুন্তি দিয়ে নামালেই হয় যাবে ডিমচিতই।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, রিকশাচালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, ছাত্র–ছাত্রী থেকে শিক্ষক, শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ—সবাই ক্রেতা। চুলার পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে গরম-গরম পিঠা খাওয়ার লোক যেমন আছে, তেমনি অফিসফেরত অনেকে ঠোঙায় পুরে পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য।
রামনগর মোড়ে সুফিয়ার দোকানে পিঠা কিনতে এসেছেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার। তিনি বললেন, ‘মেসে থাকি। তাই এখান থেকে পিঠা কিনে খাচ্ছি।’
পিঠার দোকানিরা বেশির ভাগই নারী। হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য। সংসারে সামান্য বাড়তি আয়ের আশায় অল্প পুঁজি নিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পিঠার পসরা বসিয়েছেন তাঁরা। অনেক সময় সঙ্গে থাকেন স্বামী-সন্তানদের কেউ।