সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার লামামেউহারী-ঘুলুয়া কদমতলা বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩০০ মিটারের এক পাশের রাস্তা ধসে কংস নদে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এখানকার তিনটি ইউনিয়নসহ আশপাশের লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের লামামেউহারী গ্রামের সামনের সড়কের কালভার্ট থেকে সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘুলুয়া কদমতলা বাজার পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। সড়কটি কংস নদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উপজেলার কংস নদে খনন কার্যক্রম শুরু করলে সড়কটিতে ভাঙন দেখা দেয়।
২০১৭ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে এডিপির অর্থায়নে লামামেউহারী গ্রামের কালভার্ট থেকে একটু উত্তর দিকে ঘুরিয়ে একটি অস্থায়ী মাটির সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ওই সড়কের ৩০০ মিটারের এক পাশ ধসে কংস নদে বিলীন হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সড়কটির ওপর দিয়ে যান চলাচল করা সম্ভব হয় না। এটির ওপর দিয়ে ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন, সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন, সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নসহ আশপাশের লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। এ উপজেলার মানুষকে জেলা সদরে আসা–যাওয়ার প্রধান সড়কও এটি। সড়কটির ওপর দিয়ে রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ঠেলাগাড়িসহ দৈনিক তিন শতাধিক যানবাহন চলাচল করে। দিন দিন সড়কটি ভেঙে সরু হয় যাচ্ছে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সরু সড়ক দিয়ে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। লামামেউহারী গ্রামের কালভার্টের একটি অংশ কংস নদে বিলীন হয়ে গেছে।
লামামেউহারী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক শান্ত মিয়া বলেন, পাঁচ–ছয় বছর ধরে সড়কটি বহাল। এ সড়ক দিয়ে বোরো মৌসুমে হাওর থেকে ধান পরিবহন করে আনতে গিয়ে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সড়কের ৩০০ মিটার পাকা স্থান কংস নদের পেটে চলে গেছে। সড়কটি পুনর্নির্মাণ করে পাকাকরণ ও প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
হলিদাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইকচালক রমজান মিয়া (৩০) বলেন, ‘সড়কটার উফরে দিয়া খালি গাড়ি চালাইয়া গেলেও বুকটা ধড়ফড় কইরা ওঠে। কহন যে এইডার কাম অইবো উফুর ওয়ালাই জানেন।’
সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য সেলিম তালুদার বলেন, ‘সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে যেখানে যাওয়া দরকার, সবখানেই আমি গেছি। কিন্তু স্থায়ী সমাধানে কোনো আশ্বাস পাইনি। আমি ব্যক্তিগত অর্থায়নেও সড়কের কিছু কাজ করেছি। এতে সড়কটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সড়কে বর্ষার আগেই কাজ করা না হলে কংস নদের ভাঙনে লামামেউহারী গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের বসতঘর ও গ্রামের শত শত বছরের পুরোনো কবরস্থানটি নদে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ বলেন, সড়কটির ওপর দিয়ে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নসহ আশপাশের উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। রাস্তা সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ খান বলেন, এলজিইডির হাওরাঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ সড়ক পাকাকরণ, মাটি ভরাট ও প্রতিরক্ষাদেয়ালের নির্মাণকাজের প্রাক্কলন তৈরি করে তা প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।