রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর মারধরে সোহরাব মিয়া নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের একটি কক্ষে দুই ছাত্রলীগ কর্মী তাঁকে পেটান বলে অভিযোগ উঠেছে।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে মারধরের প্রতিবাদে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
আজ বেলা তিনটার পর অবশ্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে মহাসড়ক ছেড়ে গেছেন। তিন দফা দাবি মানা না হলে কাল রোববার সকাল ১০টায় তারা ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ বেলা দেড়টার দিকে সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর প্রধান ফটকের আসেন। তাঁরা শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘটনার তদন্তে তাঁরা চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সোহরাবকে মারধরের ঘটনায় শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হন। তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের সামনের রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা মারধরে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ভার বহন এবং নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন।
আহত সোহরাব মিয়া ফাইন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন হুমায়ুন কবির ওরফে নাহিদ এবং আসিফ লাক। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী এবং শামসুজ্জোহা হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।
হল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবিরসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী সোহরাবসহ চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে হলের ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা সোহরাবকে কয়েক দিন আগের একটি ল্যাপটপ চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা সোহরাবকে মারধর করেন। এতে সোহরাব বাঁ হাত ও মাথায় আঘাত পান এবং তাঁর মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হয়। মারধরে তিনি পায়েও আঘাত পান।
এ ঘটনার পর সোহরাবের বন্ধুরা তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। পরে তাঁকে রামেক হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শনিবার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রুস্তম আলী আহমেদ জানান, সোহরাবের বাঁ হাতে ফ্র্যাকচার হয়েছে। তাঁর মাথায় কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁর বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
এ ব্যাপারে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জুলকার নায়েন বলেন, ‘রাতে আমাকে কেউ ঘটনাটি জানায়নি। শনিবার সকালে হলে এসে ওই কক্ষে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তবে অভিযুক্ত দুজনকে হলে পাইনি। এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য হল প্রশাসন থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ লাক এবং হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান জানান, তিনি ঢাকায় থাকলেও এই ঘটনার ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন।
শনিবার দুপুরে সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমি বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তাদের অভিযোগ ও দাবিদাওয়া শুনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’