রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হল থেকে এক শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাতেই প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষক ও একজন সহকারী প্রক্টর গিয়ে ওই ছাত্রকে কক্ষে তুলে দেন।
হলে থাকা শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহাদত ফাহিম দুই মাস আগে জোহা হলের ১৪২ নম্বর কক্ষে ওঠেন। প্রাধ্যক্ষ তাঁকে ওই কক্ষ বরাদ্দ দেন। তাঁর আবাসিক কার্ডও আছে। কয়েক দিন ধরে তাঁর কক্ষ দখলের চেষ্টা করছিলেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। দু-তিন দিন আগে ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে ওই কক্ষ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী কক্ষ ছাড়েননি।
এ অবস্থায় গতকাল রাত নয়টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী এসে শাহাদতের জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেন। তাঁরা ওই কক্ষে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে তুলে দেন। এ খবর পেয়ে রাতেই প্রাধ্যক্ষ একজন আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যকে নিয়ে হলে যান। তাঁরা আবার ওই শিক্ষার্থীকে তাঁর কক্ষে তুলে দিয়ে হল ছাড়েন। কিন্তু রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগের কর্মীরা আবার সেখানে যান এবং তাঁরা শাহাদতকে বলেন, তাঁদের কর্মীর সঙ্গে যেন ওই কক্ষ ভাগাভাগি করে থাকেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহাদত ফাহিম অভিযোগ করেন, তিনি এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
হলের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। জোহা হলের আবাসিক সিটগুলো প্রকাশ্যে নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগের দুটি দল। এর মধ্যে চিরন্তন চন্দ্র নামে ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী। অপর পক্ষে আছেন মোমিন ইসলাম। তিনি সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে চিরন্তন চন্দ্র বলেন, হলে ঝামেলা হয়েছে খবর পেয়ে তিনি আসেন। পরে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করেছেন। এখন কোনো সমস্যা নেই।
এদিকে মোমিন ইসলাম বলেন, তিনি ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামার নির্দেশ দেননি। এমনকি তাঁর জিনিসপত্রও বাইরে বের করার কোনো নির্দেশ দেননি। প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থীর থাকার জায়গা নেই বলে, এক রাতের জন্য বেড শেয়ার করতে বলা হয়েছিল। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি হবে। এ কারণে হলে একাধিক নেতারা প্রাধান্য বিস্তার করছেন। এটা তাঁদের কারও কাজ হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ফোন ধরেননি। তবে সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, তিনি প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন নেতা-কর্মীদের। বিষয়টি রাতেই সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা।
জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ একরামুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে তাঁর কক্ষে তুলে দিয়ে তিনি হল ত্যাগ করেন। এ সময় তিনি তাঁর কক্ষ দখলকারী কোনো শিক্ষার্থীকে পাননি। পরে রাতের দিকে আবার কাউকে সেখানে তুলে দেওয়া হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।