সাতক্ষীরার শ্যামনগর সদরের নকিপুরের তোহা বাজারের পুরোনো শেড ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর। গতকাল তোলা
সাতক্ষীরার শ্যামনগর সদরের নকিপুরের তোহা বাজারের পুরোনো শেড ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর। গতকাল তোলা

শ্যামনগরের তোহা বাজার

রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ

একটি প্রভাবশালী মহল প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব স্থাপনা নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সদরের নকিপুর তোহা (কাঁচা) বাজারের জায়গায় শুক্রবার সকাল থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় শতাধিক ব্যক্তি প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কাঁচাবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

অব্যবসায়ীদের কাছে অবৈধভাবে তোহা বাজারের জায়গা ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বলা হয়, অবৈধভাবে দেওয়া ইজারা বাতিল করতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যবসা না করতে পারলে তাঁরা পথে বসবেন। অনেকে ঠিকানা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনার রশিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, সমাজকর্মী মাহবুব এলাহী, ব্যবসায়ী আবদুর রহমান, আক্তার হোসেন প্রমুখ।

শ্যামনগরের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তোহা বাজারের জমি ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ৩৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে ২০১৬ সালে।

গতকাল বেলা একটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, তোহা বাজারের নির্মিত শেড ভাঙচুর করা হয়েছে। বন্দোবস্ত নেওয়া লোকজন শতাধিক রাজমিস্ত্রি দিয়ে পাকা ঘর নির্মাণে ব্যস্ত।

নকিপুর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী বনমালী মণ্ডল বলেন, প্রায় চার দশক ধরে এখানে বাজার বসছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে কাঁচাবাজারে ব্যবসায়ীদের জন্য শেড নির্মাণ করে। তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি একটি প্রভাবশালী মহল তোহা বাজার দখলের ষড়যন্ত্র শুরু করে। বাজারকে পরিত্যক্ত দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই বাজারের জায়গা নিজেদের অনুকূলে বন্দোবস্ত নেন।

* প্রায় চার দশক ধরে এখানে বাজার বসছে। * স্থানীয় সরকার বিভাগ কাঁচাবাজারে ব্যবসায়ীদের জন্য শেড নির্মাণ করছিল।

বনমালী মণ্ডল আরও অভিযোগ করেন, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ভুল বুঝিয়ে তোহা বাজারকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।

নবাব হোসেন বলেন, অনেকে দখল বুঝে পেলেও তিনি পাননি। সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁর নিজের নামে নয়, বাবা আবদুল লতিফের নামে এক খণ্ড জমি বরাদ্দ পেয়েছেন।

স্থানীয় সাংবাদিক আকবর কবির বলেন, তাঁরা কোনো জমি দখল করেননি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় জমি ইজারা নিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, তিনি হাইকোর্ট ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জমি বুঝিয়ে দিয়েছেন ইজারাদারদের। ওই জমি তোহা বাজারের নয় দাবি করে তিনি বলেন, সরকারি জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। তাই ইজারা দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই তিনি করেননি। তাই কে ব্যবসায়ী আর কে ব্যবসায়ী নন, তা তাঁর জানা নেই।

হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হুমায়ূন কবির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে। কাউকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়নি। ওই রায়ের ভিত্তিতে কাউকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া অবৈধ হবে।