সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জলাবন রাতারগুল শুকনো মৌসুমে জলহীন রূপ ধারণ করে। বনের ভেতরের লেকগুলোতে পানি থাকলেও বন প্রায় জলহীন। খালে পড়ে আছে পর্যটকবাহী নৌকা। আজ বুধবার দুপুরে
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জলাবন রাতারগুল শুকনো মৌসুমে জলহীন রূপ ধারণ করে। বনের ভেতরের লেকগুলোতে পানি থাকলেও বন প্রায় জলহীন। খালে পড়ে আছে পর্যটকবাহী নৌকা। আজ বুধবার দুপুরে

রাতারগুলে সংরক্ষিত বনের জায়গায় হচ্ছে পার্কিং, গ্রামবাসীর বাধা

সিলেটের জলাবন রাতারগুল যেতে তিনটি পথ। এর মধ্যে একটি পথ রাতারগুল গ্রামসংলগ্ন। পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের অর্থায়নে স্থানীয় প্রশাসন এই পথে পাকা রাস্তা নির্মাণ করেছে। পাকা রাস্তা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে শুরু বন বিভাগের সংরক্ষিত জায়গা। এখন সেখানে যানবাহনের পার্কিংয়ের জন্য বনের সংরক্ষিত জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। এ বিষয়ে বন বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। এরপরও পার্কিং নির্মাণের কাজ না থামানোয় রাতারগুল গ্রামবাসী বাধা দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার গ্রামবাসীর বাধার মুখে পার্কিং নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রী সরিয়ে ফেলা হলেও এখনো পুরো জায়গায় মাটি খোঁড়ার কাজ করে চলেছেন একদল নির্মাণশ্রমিক। আজ বুধবার সরেজমিন শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) হওয়ায় ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের পুরো এলাকা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল। ২০১২ সালের বিশ্ব পর্যটন দিবসে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় রাতারগুলের একটি আলোকচিত্র প্রকাশিত হলে তা নতুন করে পরিচিত করে তোলে রাতারগুলকে।

গতকাল মঙ্গলবার গ্রামবাসীর বাধার মুখে পার্কিং নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রী সরিয়ে ফেলা হলেও এখনো পুরো জায়গায় মাটি খোঁড়ার কাজ করে চলেছেন একদল নির্মাণশ্রমিক।

‘রাতারগুল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য স্থাপন ও উন্নয়ন’ নামে বন বিভাগের একটি প্রকল্প প্রস্তাবের তথ্যে উল্লেখ রয়েছে, রাতারগুল দেশের একমাত্র সমৃদ্ধ জলার বন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচ-বরুণগাছের পাশাপাশি বেত, ইকরা, খাগড়া, মূর্তা ও শণজাতীয় গাছ রাতারগুলকে জলাবন হিসেবে অনন্য করেছে। সংরক্ষিত বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে।

আজ সরেজমিন দেখা যায়, রাতারগুল গ্রামের মুখ দিয়ে যে সরু খাল রাতারগুল বনে গেছে, সেই খালের এক পাশে পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের নির্মিত রাস্তা গিয়ে শেষ হয়েছে। পাকা এই রাস্তা থেকে খাল দিয়ে নৌকায় করে রাতারগুল বনে প্রবেশ করা যায়। রাস্তা নির্মাণ হওয়ার আগে থেকে রাতারগুল বনে প্রবেশের পথটি ঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

জলাবন রাতারগুল যাওয়ার পাকা রাস্তার শেষ প্রান্তে বন বিভাগের জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে পার্কিং। আজ বুধবার দুপুরে রাতারগুলে

গ্রামবাসী বলছেন, রাতারগুল সংরক্ষিত বনের যে জায়গা রয়েছে, তার অন্তত ২০ শতক জায়গা পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করতে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনের জায়গায় এই স্থাপনা নির্মাণ হলে দোকানপাটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনার মাধ্যমে বন বিভাগের জায়গা দখলের সুযোগ তৈরি হবে বলে তাঁরা ঘাট বা পার্কিংয়ের জন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণের আপত্তি তুলছেন। গ্রামবাসীর বাধার মুখে পার্কিং নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলা হলেও পুরো জায়গায় মাটি খোঁড়ার কাজ করে চলেছেন একদল নির্মাণশ্রমিক।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে নির্মাণকাজের ঠিকাদার লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পার্কিংস্থলটির অধিকাংশ খাসজায়গায় পড়েছে। যদিও কিছু জায়গা বন বিভাগের, এরপরও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় তাঁরা কাজ করছিলেন।

গ্রামবাসীর বাধার মুখে পার্কিং নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলা হলেও পুরো জায়গায় মাটি খোঁড়ার কাজ করে চলেছেন একদল নির্মাণশ্রমিক। আজ বুধবার দুপুরে রাতারগুলে

রাতারগুল গ্রামের বাসিন্দা সোনা মিয়া বলেন, গত বছর রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হলে এ বছরের শুরু থেকে ঘাট এলাকায় পার্কিংয়ের নামে স্থাপনা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। এ কাজে গ্রামবাসী মৌখিকভাবে বন বিভাগকে অবহিত করেন। পরে বন বিভাগও আপত্তি জানায়। গ্রামবাসী ও বন বিভাগের আপত্তির মুখে পার্কিং কাজ চলায় তাঁরা মঙ্গলবার বিকেলে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

সিলেট বন বিভাগের সারী রেঞ্জের অধীন এই জলাবন। সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদ উদ্দিন পার্কিংস্থল সংরক্ষিত বনে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। গ্রামবাসীর মতো রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদ উদ্দিনও সংরক্ষিতে বনে পার্কিংস্থল হলে আশপাশের জায়গা দখলের মুখে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান । তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও কাজ চলায় তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন। আবার এ বিষয়ে আপত্তি জানানো হবে।

বনের ভেতরের লেকগুলোতে পানি থাকলেও বন প্রায় জলহীন। খালে পড়ে আছে পর্যটকবাহী নৌকা। আজ বুধবার দুপুরে

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, পার্কিং নির্মাণে বন বিভাগের লিখিত কোনো আপত্তির বিষয়ে তিনি অবহিত নন। তিনি উপজেলায় নতুন যোগ দিয়েছেন বলে জানান।

ইউএনও বলেন, পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের কাজটি গত অর্থবছরের। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজটি পিছিয়েছে। পাকা রাস্তা নির্মাণের পর যানবাহনের জন্য একটি পার্কিং নির্মাণ করার কথা। প্রকল্প মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ায় কাজটি দ্রুত করা হচ্ছিল। ৩০ বাই ১৮ ফুট জায়গায় পার্কিং হবে। একটি অংশ বোধ হয় বন বিভাগের জায়গায় পড়েছে। এই জায়গায় কোনো বনাঞ্চল নেই, পরিত্যক্ত বলা যায়। এখন গ্রামবাসী আপত্তি জানানোয় কাজটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সরেজমিন দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।