রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

পরীক্ষার আগেই একটি প্রশ্নপত্র ফেসবুকে দিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. ইসতিয়াক হোসেন। পরে পরীক্ষাটি স্থগিত হয়ে যায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনাটি ‘ভুলবশত’ ঘটেছে বলে ওই শিক্ষক জানিয়েছিলেন। এবার ইসতিয়াক হোসেন একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক মো. ইয়ামিন হোসেনের বিরুদ্ধে অনলাইন ক্লাসে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এনেছেন।

এ বিষয়ে আজ সোমবার দুপুরে ইসতিয়াক হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই অভিযোগ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও বিভাগের সভাপতি বরাবরও দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগে ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কোর্সের শিক্ষক ইয়ামিন হোসেন গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর একটি অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কাছে একটি প্রশ্নপত্র শেয়ার করেন। ওই প্রশ্নপত্র দিয়েই ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অল্প কিছু শব্দ ছাড়া দুই প্রশ্নপত্রের মধ্যে কোনো অমিল নেই।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এভাবে অনলাইন ক্লাসে প্রশ্ন শেয়ার করা নৈতিকতা বিবর্জিত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিপন্থী এবং শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা। এ কারণে বিধি মোতাবেক ইয়ামিন হোসেনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা বাতিল করার অনুরোধ করেন তিনি।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আলমগীর হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বেলা আড়াইটার দিকে অভিযোগটি পেয়েছেন। অভিযোগটি খুবই গুরুতর। এ কারণে তিনি অভিযোগটি উপাচার্য বরাবর পাঠাবেন। এর আগে ওই বিভাগ থেকে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে দেওয়ার অভিযোগ এসেছিল। ওই ঘটনারও তদন্ত চলছে।

ওই বিভাগের যেসব বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ নিয়ে আগামী রোববারই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
গোলাম সাব্বির সাত্তার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

অভিযোগকারী ইসতিয়াক হোসেন বলেন, তিনি ভুলবশত যে মডারেট প্রশ্ন ফেসবুকে দিয়েছিলেন, সেটা অন্যায় হলে তিনি শাস্তি পেতে রাজি আছেন। প্রশ্নপত্র মডারেশনের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম হচ্ছে, সেটা ধরিয়ে দিতেই তিনি অভিযোগ দিয়েছেন। এই বিভাগের পরীক্ষা কমিটি প্রশ্নপত্র কীভাবে মডারেশন করে, সেটা প্রায় সবাই জানে বলে তিনি দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা এই অনিয়মের ভুক্তভোগী হচ্ছেন। তাই তিনি এর শাস্তি চান।

অভিযোগের বিষয়ে ইয়ামিন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অভিযোগের বিষয়টি শুনেছেন। তিনি এ রকম একটি প্রশ্ন অনলাইন ক্লাসে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ছিল ২০১৮ সালের জুনে অনুষ্ঠিত একটি পরীক্ষার প্রশ্ন। পরে হয়তো পরীক্ষায় সেই প্রশ্নের সঙ্গে বেশি রিপিট (পুনরাবৃত্তি) হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্নকর্তা হিসেবে তিনি প্রশ্ন করতেই পারেন। মডারেশনের সময় প্রয়োজনে সেটা পরিবর্তন করা হবে। শুধু প্রশ্নকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে পারে না। অভিযোগকারী শিক্ষকও পরীক্ষা কমিটির সদস্য। অভিযোগকারী তাঁর সম্মানহানির জন্য এটা করছেন বলে তিনি দাবি করেন। শিগগিরই তিনি এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি মাত্রই আপনার কাছ থেকে শুনলাম।’ তবে প্রশ্নপত্র মডারেশনের বিষয়ে কথা বলতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে তিনি বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ফিশারিজ বিভাগের সভাপতি এম মঞ্জুরুল আলম বলেন, পরীক্ষা কমিটি একটি স্বাধীন বোর্ড। এতে সভাপতির কোনো কাজ নেই। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মডারেশন নিয়ে যে অভিযোগগুলো আলোচনায় আছে, সেটা পরীক্ষা কমিটি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, আগের একটি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা তাহলে নতুন ঘটনা হতে পারে। নতুন এ অভিযোগের বিষয়ে তিনি এখনো কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

পরীক্ষা কমিটির প্রশ্নপত্র মডারেশন বিষয়ে সাব্বির সাত্তার বলেন, ওই বিভাগের যেসব বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ নিয়ে আগামী রোববারই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। অ্যাকাডেমিক অন্যায়ে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।