এবারের এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী ও নওগাঁর গুড়িহারী শালবাড়ির দুই আলোর পাঠশালার সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। দুর্গম এলাকার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আলোর পাঠশালায় পাঠদান করা হয়। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা পাস করায় তাদের পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে।
রাজশাহী আলোর পাঠশালার চারজন শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে বুসরা খাতুন নামের এক শিক্ষার্থীর জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ পেয়ে পাস করেছে। বুসরা বলে, অষ্টম শ্রেণিতে উঠতে উঠতেই তাদের এলাকার মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। এক বছর আগে তারও বিয়ে হয়েছে। শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় সে শ্বশুরবাড়ি থেকেই পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুশি হয়েছেন। বুসরা পড়াশোনা বন্ধ করবে না বলে জানায়।
রাজশাহী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন বলেন, রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিচ্ছিন্ন চরের এই শিক্ষার্থীদের সবাই ঝরে পড়া। তারা সংসারের কাজের পাশাপাশি আলোর পাঠশালায় পড়াশোনা করেছে। তাঁদের পাঠশালার ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই মেয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও অষ্টম শ্রেণিতে উঠতে উঠতেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়। করোনার কারণে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছিল। এই অবস্থায় তাদের চারজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। সবাই পাস করেছে। পরীক্ষায় তারা ভালো নম্বর পেয়েছে, কিন্তু অ্যাসাইনমেন্টে তারা কম নম্বর পেয়েছে। নইলে বুসরা খাতুন জিপিএ-৫ পেত।
অবহেলিত ছয়টি জায়গায় আলোর পাঠশালা নামে স্কুল পরিচালনা করছে প্রথম আলো ট্রাস্ট।
নওগাঁর গুড়িহারি শালবাড়ী আলোর পাঠশালার ১০ শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের সবাই পাস করেছে। এ পাঠশালার প্রধান শিক্ষক নূর আলম বলেন, তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরজুমা খাতুন জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পেয়ে পাস করেছে। উত্তম দাশ জিপিএ-৪ পেয়ে পাস করেছে।
বাংলাদেশের যে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বহু দিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি, সে রকম অবহেলিত ছয়টি জায়গায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ‘আলোর পাঠশালা’ নামের এই ৬টি স্কুলে সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।