রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৫ জন পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজমাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের ১৫টি গুলি ছোড়ে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সম্মেলন উপলক্ষে বেলা ১১টার দিকে শাহদৌলা সরকারি কলেজমাঠে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন অতিথিরা। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর সাবেক পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর সমর্থকেরা মঞ্চের সামনে তাঁর নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁদের বাধা দেন শাহরিয়ার আলমের সমর্থকেরা। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় নেতা–কর্মীরা মঞ্চের ওপরে চেয়ার ছুড়ে মারেন, চেয়ার ভাঙচুর করেন, কাঠ, দেশীয় অস্ত্র ও বাঁশের লাঠি দিয়ে একে অন্যকে ধাওয়া দেন। আধা ঘণ্টাব্যপী এ সংঘর্ষের কারণে অতিথির সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। পরে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
সংঘর্ষে আহত নেতা–কর্মীদের বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন পৌর আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল কুদ্দুস সরকার, শাহরিয়ার হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, সাইফুর ইসলাম, মুরাদ হোসেন, লিটন ভূঁইয়া, আলম হোসেন, সুজন আলী, এম এস এ রেজাসহ ২০ জন। এর মধ্যে সাইফুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দীন লাভলু প্রমুখ। এ ঘটনায় বক্তব্যের জন্য মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তাঁরা কেউ সাড়া দেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীদের নিয়ে সম্মেলনস্থলে ঢুকতে গেলে তাঁকে বাধা দেন অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকেরা। কথা বলতে গেলে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। তাঁর লোকজনকেই মারধর করা হয়। পুলিশও তাঁদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে তাঁর অন্তত ২০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পরও পুলিশ তাঁর বাড়ির কাছে এসে তিনটি মোটরসাইকেল ভেঙেছে ও নিরীহ লোকজনকে মারধর করেছে।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আক্কাছ আলী তাঁর লোকজন নিয়ে এসে মারমুখী আচরণ শুরু করেন। তাঁরাই চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু করেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বাজে কথা বলেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের বের করে দিলে তাঁরা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালান। এতে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। বাধ্য হয়ে পুলিশকে শটগান থেকে প্রায় ১৫টি গুলি চালাতে হয়েছে। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন হয়েছে।
বেলা আড়াইটার দিকে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন রাজশাহীর সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। এতে সভাপতি হিসেবে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরাফুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়।