ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি তুরাগ নদের ওপর নির্মিত। সেতুর এক পাশে ঢাকার উত্তরা ও আবদুল্লাহপুর, অন্য পাশে গাজীপুরের টঙ্গী। সেতুটির কয়েকটি পিলারে ভাঙন ধরেছে। অযত্ন-অবহেলায় যান চলাচলের জন্য সেতুটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সেতুর পিলারে নেই নিরাপত্তাবেষ্টনী। দেয়ালে রয়েছে ফাটল। পথচারী চলাচলের জন্য নির্মিত ফুটপাতে বসে দোকানপাট। সড়কবাতি নেই, তাই সন্ধ্যার পর থাকে ছিনতাইকারীর ভয়। তবু ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে।
এলাকাবাসী জানান, নদীর মাঝখানে সেতুর দুটি পিলারের একটিতে পাঁচ-ছয়টি বিশাল গর্ত। পাশে বেহাল হয়ে পড়ে আছে লাল-সাদা নিরাপত্তাবেষ্টনী বা নিরাপত্তাখুঁটি। বর্ষাকালে বড় নৌযানের ধাক্কায় পিলারটির নিরাপত্তাবেষ্টনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছোট-বড় নৌযানের ধাক্কায় পিলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন পার হলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সেতুটি মেরামতের ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে হয়তো সবার টনক নড়বে। কিছুদিন পর শুরু হবে বর্ষা। এর আগে কোনো ব্যবস্থা না নিলে সেতুটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
গত মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, গাজীপুর অংশে সেতুর গোড়ায় কিছু অংশের ঢালাই ধসে পড়েছে। সেখানে সড়কের মাটি আটকানোর জন্য বাঁশ দিয়ে ঠেকা দেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু অংশ এখনো ফাঁকা হয়ে আছে। তার পাশেই সেতুর নিচে খুপরির মতো ঘর করে থাকছেন কিছু লোক। কথা হলে তাঁরা জানান, বছরখানেক আগে বৃষ্টির পানিতে এই অংশটি ভেঙে পড়ে। পরে তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় সড়ক বিভাগের লোকদের জানালে তাঁরা বাঁশ দিয়ে ঠেকা দেন। গাজীপুর অংশে সেতুটির প্রথম পিলারটির পলেস্তারা খসে দুটি রড বেরিয়ে গেছে। মরিচা পড়ে সেগুলোও ক্ষয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া পিলারটির বিভিন্ন অংশে ফাটল আছে। এর মধ্যে সেতুর প্রথম পিলারটির পাশেই সেতুর মাঝ বরাবর রয়েছে একটি বড় ধরনের ফাটল।
সোমবার সন্ধ্যায় ছেলে জুবায়েরকে নিয়ে উত্তরার একটি কোচিং সেন্টার থেকে ফিরছিলেন টঙ্গীর বউবাজার এলাকার হামিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘যানবাহন, মানুষ আর ফুটপাতের দোকানপাটের কারণে পথচলা দায়। এরপর সড়কবাতি না থাকায় অনেকটা ভয়ে ভয়ে পথ চলতে হয়। অনেক সময় পোলাপাইন (ছিনতাইকারী) হুটহাট মোবাইল নিয়া দৌড় দেয়। তখন কিছু করার থাকে না।’
টঙ্গী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সন্ধ্যা হলে সেতুটিতে অন্ধকার নেমে আসে। সড়কবাতি না থাকায় পথচারীকে চলতে হয় অন্ধকারে। এর মধ্যে থাকে ছিনতাইকারীর ভয়। তা ছাড়া সেতুটির ফুটপাতে প্রায়ই বসে ভাসমান দোকানপাট। এতে পথচারী চলাচলে সমস্যা হয়। এসব দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় সেতুর রেলিংয়ের পাশেই। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সেতুর পূর্ব পাশের রেলিংয়ের এক পাশে ময়লার ভাগাড় করা হয়েছে। সেখানে নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে এসব ভাসমান দোকানের ময়লা। কেউ কেউ ময়লা–আবর্জনা সরাসরি ফেলছে নদীতে। জানতে চাইলে সেতুর ফুটপাতের পান-সুপারি বিক্রেতা বাশার আলী বলেন, ‘এখন ঠিকমতো বসা যায় না। পুলিশ দেখলেই সবকিছু নিয়া নেয়। এরপরও সুযোগ বুইঝা একটু ব্যবসা করি।’ আরেকজন সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘আমাদের পক্ষে বড় দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। তাই ফাঁকে ফাঁকে দোকান নিয়া বসি আর কি।’
টঙ্গী সড়ক উপবিভাগের প্রকৌশলী শাম্মি সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, এই সড়ক এবং সেতু এখন বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের আওতাধীন। ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ তারাই করে।
বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক (এলিভেটেড অংশ) লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে পুরোনো দুটি সেতুর পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। সেতুটি হয়ে গেলে এসব সমস্যা আর থাকবে না। এরপরও পুরোনো সেতুর কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে আমরা মেরামত করব।’