রাজশাহীর বাগমারার গোড়সারের কলেজছাত্রী সুমি আক্তার বগুড়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর চিকিৎসার জন্য দ্রুত ‘ও’ নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন ছিল। দুর্লভ এই গ্রুপের রক্ত না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সুমির পরিবারের সদস্যরা। পরে স্থানীয় এক শিক্ষকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তদান পরিষদ বাগমারা।
কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সংগঠনের সদস্য জাকিরুল ইসলাম এক ব্যাগ রক্ত দেন। বিশেষ ব্যবস্থায় ওই রক্ত বাগমারা থেকে বগুড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এভাবেই মানুষের প্রয়োজনে রক্তদানে সদা প্রস্তুত থাকে রক্তদান পরিষদ বাগমারা।
২০১৮ সাল থেকে পাঁচ তরুণ মিলে রক্তদান কার্যক্রম শুরু করেন। পরিচিতজনদের ডাকে সাড়া দিয়ে তখন তাঁরা চলে যেতেন রক্ত দিতে। বিষয়টি ধীরে ধীরে বন্ধুমহলে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েক বন্ধু। রক্তের প্রয়োজনে তখন বেশ ঘনঘন ডাক আসতে শুরু করে।
এরপর তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। সংগঠনের নামেই এই গ্রুপে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। মূল সংগঠনের সদস্য বর্তমানে ৪৫ জন। যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। গত তিন বছরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে তাঁরা বিনা মূল্যে রক্ত দিয়েছেন। আর বর্তমানে প্রতি মাসেই ২৫ থেকে ৩০ ব্যাগ রক্ত দান করে থাকেন।
সংগঠনের সভাপতি হাসানুজ্জামান শফিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী ও মানবসেবায় আগ্রহী ব্যক্তিদের নিয়ে এই সংগঠন করা হয়েছে। আমরা সবাই নিয়মিত রক্ত দেই। সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্যই শিক্ষার্থী। নিজের পকেটের খরচের টাকা বাঁচিয়ে সংগঠন পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া সংগঠনের কয়েকজন উপদেষ্টা আছেন। তাঁরাও আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।’
উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের ভেতরে এই সংগঠনের পোস্টার সাঁটানো আছে। যোগাযোগের জন্য সেখানে দেওয়া আছে সংগঠনের মুঠোফোন নম্বর। রক্তের প্রয়োজন হলে কখনো রোগীর স্বজনেরা আবার কখনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সংগঠনের উপদেষ্টা এনামুল হক সরকার জানান, সংগঠনের সদস্যরা নিয়মিত রক্তদানের পাশাপাশি নতুন রক্তদাতা খুঁজে বের করেন। এ জন্য মাঝেমধ্যেই বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাঁরা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর এরকম একটি আয়োজনে তাঁরা শতাধিক ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেছেন। এর মধ্যে অনেকেই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয় বিনা মূল্যে রক্ত দেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলার বাইরে রাজশাহী শহরেও এই সংগঠনের সদস্য আছেন। যাঁরা মূলত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসেন। এ ছাড়া সংগঠনের সদস্যরা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বেশ কয়েকজন রোগীকে নিয়মিত রক্ত দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ হলো থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত উপজেলার বিলবাড়ি গ্রামের সিয়াম হোসেন (৪) ও দেউলা গ্রামের মাইশা খাতুন (৫)। তিন মাস পরপর তাঁদের রক্ত দিতে ছুটে যান রক্তদান পরিষদের সদস্যরা।
সিয়ামের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, রক্তদান পরিষদের সদস্যরা বিনা মূল্যে রক্ত না দিলে হয়তো তাঁর ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন না। তিনি সব সময় তাঁদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
বাগমারা উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ বলেন, দুই বছর বাগমারায় দায়িত্ব পালনের সময় তিনি এই সংগঠনের কার্যক্রম দেখেছেন। তাঁদের কার্যক্রম প্রশংসার দাবি রাখে। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই সংগঠনকে সহযোগিতা করা হয়েছে।