গাংনীতে নির্বাচনী সহিংসতা

রক্তের দাগ শুকায়নি, গ্রামে পুলিশের পাহারা

নির্বাচনী সহিংসতায় দুই ভাই নিহতের পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

যেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে। তার পাশেই জনাদশেক পুলিশ পাহারায়। পাকা সড়ক পেরিয়ে বড় একটি পুকুরসংলগ্ন কাচা সড়কের পাশে সহিংসতায় নিহত দুই ভাই জাহারুল (৪৭) ও সাহাদুলের (৪৩) পাশাপাশি বাড়ি।

আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁদের বাড়িতে ঢুকতেই জাহারুলের মা জাহেরা খাতুনকে বিলাপ করতে দেখা গেল। ছেলেদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তিনি এখনো খাবার স্পর্শ করেননি। জাহেরা খাতুনের ছয় মেয়ে; ছেলে ওই দুটিই। দুই ছেলেকেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঘটনার পরপরই ছয় মেয়ের সবাই বাড়িতে এসেছেন। বাড়ির বাইরে থেকে তাঁদের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতায় দুই ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, কাথুলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামের ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করছেন বর্তমান ইউপি সদস্য আজমাইন হোসেন। তাঁর মামাতো ভাই নিহত জাহারুল ও সাহাদুল। একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আতিয়ার রহমান নামের একজন। আতিয়ার গাংনী উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। আজমাইন ও আতিয়ার দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে তাঁদের বিরোধ চরমে পৌঁছায়। নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে গত রোববার দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জেরে গতকাল সকাল আটটার দিকে আতিয়ার ও তাঁর সমর্থকেরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আজমাইন হোসেনের সমর্থকদের ওপর হামলা করেন। এ সময় আজমাইনের মামাতো দুই ভাই ধারালো অস্ত্রের কোপে ঘটনাস্থলে নিহত হন, আহত হন আরও ১০ জন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত জাহারুলের স্ত্রী শেফালি খাতুনকে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তিনি এখনো চিকিৎসাধীন।

১০০ গজের মধ্যে প্রার্থী আতিয়ার রহমান ও আজমাইন হোসেনের বাড়ি। প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পর থেকে আতিয়ার ও তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকের বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। তবে অনেক বাড়িতে শুধু নারী সদস্যরা রয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, গ্রামে দুটি পক্ষের মধ্যে এক যুগ ধরে বিরোধ চলছে। এ বিরোধের জেরে আগেও একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় ধলা বিল নিয়ে বিরোধের প্রথম সূত্রপাত হয়। বিল দখলকে কেন্দ্র করে ২০০০ সালে সাইদুল হোসেন নামের একজন খুন হন। পরে এর জেরে ২০১৭ সালে এনামুল হোসেন নামের একজনকে প্রতিপক্ষ আতিয়ার রহমানের সমর্থকেরা একটি বাঁশবাগানে চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা করেন। ওই ঘটনায় গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই মামলার প্রধান আসামি আতিয়ার রহমান, সম্প্রতি তিনি জামিনে বের হন।

১০০ গজের মধ্যে আতিয়ার রহমান ও আজমাইন হোসেনের বাড়ি। প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পর থেকে আতিয়ার ও তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকের বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। তবে অনেক বাড়িতে শুধু নারী সদস্যরা রয়েছেন। রাতে পুলিশ পাহারা থাকার কারণে কারও বাড়িতে লুটপাট হয়নি।

আতিয়ারের বড় বোন টোটন আরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের বিরোধে সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে আছে। রাত হলেই গরু-ছাগলসহ আসবাবপত্র লুট হওয়ার আশঙ্কায় নারীরা বাড়ি ছেড়ে যেতে পারেনি।

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম জানান, গতকাল রাতে লাশ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে পুলিশি পাহারায় এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।