বিয়ের পর থেকে যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী আনিকা আক্তারকে নির্যাতন করার অভিযোগ ছিল সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের কারণে আনিকা এখন দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। মাথা ও চোখের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শয্যায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
আনিকা শরীয়তপুর পৌরসভার স্বর্ণঘোষ গ্রামের আবু তালেব খানের মেয়ে। সাদ্দামের বাড়ি পৌরসভার হুগলী এলাকায়। এ ঘটনায় আবু তালেব খান বাদী হয়ে সদরের পালং মডেল থানায় গতকাল শুক্রবার রাতে একটি মামলা করেছেন। মামলায় সাদ্দাম হোসেন, তাঁর বাবা আলী আহম্মেদ মোল্যা ও মা রোকেয়া বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
পালং মডেল থানা ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর সাদ্দাম হোসেন মোল্যার (৩০) সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আনিকা আক্তারের (১৯)। সাদ্দাম ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অফিস সহায়ক হিসেবে মাস্টার রোলে কর্মরত। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাতে ওই গৃহবধূকে মারধর করতেন সাদ্দাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি চাকরি নিয়মিতকরণ ও বাড়িতে ঘর নির্মাণ করার জন্য স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেন সাদ্দাম। এতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয়। একপর্যায়ে সাদ্দাম স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দেন। এতে তিনি জ্ঞান হারান। এরপর কাঁচি দিয়ে তাঁর চুল কেটে দেওয়া হয়। ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানাননি ওই গৃহবধূ।
মারধরের পর চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন আনিকা। মাথায়ও যন্ত্রণা শুরু হয়। খবর পেয়ে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন বাবা আবু তালেব খান। পরে তাঁকে গত ৩ মার্চ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মারধরের পর চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন আনিকা। মাথায়ও যন্ত্রণা শুরু হয়। খবর পেয়ে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন বাবা আবু তালেব খান। পরে তাঁকে গত ৩ মার্চ গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আই হসপিটাল অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এমআরআই ও সিটিস্ক্যান করার পর জানা যায়, মাথায় আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণ হয়েছে ও দুটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আবু তালেব খান বলেন, ‘চাকরি ও বাড়ি করার কথা বলে সাদ্দাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা টাকা চাইতেন। “টাকা কোথায় পাব,” এমনটা বললে আমার মেয়েকে নির্যাতন করা হতো। এখন মেরে মেয়ের চোখ দুটির ক্ষতি করে দিয়েছে। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছে। তার ফলাফল পেলে কী অবস্থা, তা বোঝা যাবে।’
সাদ্দাম হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কেন আমার স্ত্রীকে মারধর করব? কেনই–বা চুল কাটব? আমি শুনেছি, সে অসুস্থ। তাই শ্বশুরের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিচ্ছি, তিনি ফোন ধরছেন না।’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, গৃহবধূকে নির্যাতন, মারধর ও যৌতুক দাবির বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।