ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর ওপর নির্মিত বাসন্ডা সেতুর এক পাশ বন্ধ করে মেরামতের কাজ চলছে। গত বুধবার তোলা ছবি
ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর ওপর নির্মিত বাসন্ডা সেতুর এক পাশ বন্ধ করে মেরামতের কাজ চলছে। গত বুধবার তোলা ছবি

বাসন্ডা বেইলি সেতু

যানবাহন উঠলেই দুলতে থাকে

ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা সেতুর ওপর নির্মিত এ সেতুর অবস্থা নাজুক। সওজ পাঁচ বছর আগে এটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল।

সেতুর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য জোড়াতালি। পুরোনো হয়ে যাওয়ায় কয়েক মাস পরপর সেতুতে মেরামতের কাজ করতে হয়। ভারী যানবাহন উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। এ দুরবস্থা বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি বাসন্ডা বেইলি সেতুর। বিকল্প না থাকায় এ সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

স্থানীয় এবং সড়ক ও জনপথ সূত্র জানায়, বর্তমানে সেতুটির অবস্থা খুবই নাজুক। পাঁচ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। প্রতিবছর এ সেতু মেরামতের জন্য ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। গত পাঁচ বছর এ সেতু সংস্কার করতে গিয়ে সওজের এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তাই খরচ কমানোর জন্য এবং ঝুঁকি এড়াতে এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় সওজের ঝালকাঠি কার্যালয় এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে ওই কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা বেইলি সেতুর স্থানে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করার জন্য ঢাকায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। ওই ডিপিপি অনুমোদিত হলে এখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।

সওজের ঝালকাঠি কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা নদীর ওপর বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯৪ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ ভারী যানবাহন এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। ভারী যানবাহন চলাচল করায় সেতুর স্টিলের পাটাতন ফেটে যায় এবং নাটবল্টু খুলে যায়। এ কারণে এটি বারবার মেরামত করা হলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গাড়ি উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। এটি ভেঙে পড়লে সড়কপথে ঝালকাঠির সঙ্গে পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও যশোরের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।

সওজের ঝালকাঠি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করায় সেতুর কোনো কোনো স্থানে স্টিলের পাটাতনগুলোতে ফাটল ধরে। কিছু পাটাতন স্থানচ্যুত হয়ে যায়। এসব কারণে ২০১৬ সালেই সওজ ঝালকাঠি কার্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন সেতুটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেন।

গত সোমবার সকালে বাসন্ডা সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, ভারী যানবাহন উঠলেই সেতুটি ভয়ানকভাবে দুলতে থাকে। সেতুর এক অংশের স্টিলের পাটাতনে সওজের কর্মীরা ঝালাই দিচ্ছেন।

খুলনা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহী গাড়ির চালক মোতালেব হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও প্রতিদিন যাত্রীদের নিয়ে সেতু পার হতে হয়। এভাবে জোড়াতালির পেছনে কোটি টাকা ব্যয় না করে বাসন্ডা সেতুতে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।

সওজের ঝালকাঠি কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সেতুটির কিছু পাটাতন পরিবর্তন এবং ঝালাইয়ের কাজে গত পাঁচ বছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।

সওজের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল বলেন, ‘ওয়েস্টার্ণ বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’–এর তালিকায় বাসন্ডা সেতুটির নাম আছে। প্রকল্প পরিচালকের কাছে বাসন্ডা সেতুটি জরাজীর্ণ উল্লেখ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুমোদিত হলে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।