ফেরি স্বল্পতা ও অতিরিক্ত গাড়ির চাপে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গাড়ির লম্বা সারি তৈরি হয়েছে
ফেরি স্বল্পতা ও অতিরিক্ত গাড়ির চাপে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গাড়ির লম্বা সারি তৈরি হয়েছে

‘যানজটে বসে থাকতে থাকতে হাত-পা ফুলে যাচ্ছে’

‘যানজটে বসে থাকতে থাকতে হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। নড়তে পারছি না, চলতেও পারছি না। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি। হেলপারও নাই, গেছে বাইরে। গাড়ি রেখে কোথাও যেতেও পারছি না। সারাক্ষণ এই গাড়িতে বসে সময় কাটছে। এভাবে আর কতক্ষণ গাড়িতে থাকা যায়?’ কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষমাণ যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক মামুন মোল্লা।

আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে মামুন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নড়াইল থেকে মালামাল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সেদিন সন্ধ্যায় ফেরিঘাট থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড়ে পৌঁছালে যানজটের জন্য পুলিশ তাঁর গাড়ি আটকে দেয়। রাত শেষে পরদিন শুক্রবার ছেড়ে দিলেও এখন পর্যন্ত তিনি ফেরিঘাটেই আটকে আছেন।

শনিবার দুপুরে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, ঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার লম্বা সারিতে শুধু সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি। অধিকাংশই বৃহস্পতিবার রাতে ও পরদিন শুক্রবার সকাল থেকে ফেরিতে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে। এ ছাড়া ফেরিঘাট থেকে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় পর্যন্ত সাধারণ যাত্রীবাহী বাস, পচনশীল পণ্যের ট্রাক ও ছোট গাড়ির একটি সারি আছে। সেগুলোকে আগে যেতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে ওই যানবাহনগুলোও পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ধরে আটকে আছে।

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন লোকজন

বেনাপোল থেকে আসা তুলাবোঝাই একটি ট্রাকের চালক মো. হানিফ বলেন, ‘ঘাটের যে কত সমস্যা, বলে শেষ করা যাবে না। গতকাল শুক্রবার বাসের চাপ ছিল। আজ শনিবার, তেমন বাস নেই, তারপরও এত লম্বা লাইন। এখানে চলে টাকার খেলা। আইনগত সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমরাও তো মানুষ, আমরা এর একটা বিহিত চাই। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দয়া করে এই ঘাটের দিকে একটু নজর দিন।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৩টি ফেরি চালু রাখা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় ফেরির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাঁচটি ফেরি ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট ১৮টি ফেরির মধ্যে শনিবার সকালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি ‘বনলতা’ বিকল হয়ে পড়ে। সেটিকে মেরামতের জন্য পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় নেওয়া হয়েছে। এর আগে শুক্রবারও আরেকটি ফেরিকে কারখানায় নেওয়া হয়েছে। ফলে ঘাটে এখন ফেরি সচল আছে ১৬টি। ফেরিস্বল্পতার জন্যই যানবাহন পারাপারে দেরি হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, পাঁচটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হওয়ায় মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে আছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার দূরপাল্লার পরিবহন ছাড়াও ব্যক্তিগত বা ছোট গাড়ির অতিরিক্ত চাপ ছিল। ওই সব গাড়ি পার হওয়ায় সাধারণ পণ্যের গাড়ি তেমন একটা পার হতে পারেনি। এর মধ্যে শুক্র ও শনিবার দুটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে পড়ায় বর্তমানে ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।