যাত্রীর স্রোতে বন্ধ দুই নৌপথ

করোনা সংক্রমণ রোধে এবারের ঈদ যে যেখানে আছেন, সেখানেই করার নির্দেশনা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী হাজারো মানুষ ঢাকা ছেড়ে আসছেন। বেশির ভাগ যাত্রীকেই মোটরসাইকেলে আসতে দেখা যায়। কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম। গতকাল সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ছবি: এম রাশেদুল হক
করোনা সংক্রমণ রোধে এবারের ঈদ যে যেখানে আছেন, সেখানেই করার নির্দেশনা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী হাজারো মানুষ ঢাকা ছেড়ে আসছেন। বেশির ভাগ যাত্রীকেই মোটরসাইকেলে আসতে দেখা যায়। কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম। গতকাল সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে।  ছবি: এম রাশেদুল হক

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি অফিসে ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয় ৩০ মে পর্যন্ত। ছুটির সময় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে এ-সংক্রান্ত সরকারি আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথের চিত্র ভিন্ন। ওই দুই নৌপথ দিয়ে হাজারো মানুষ ঢাকা ছাড়ছিল। আবার ঢাকায় ফেরা মানুষের সংখ্যাও ছিল বেশ। এই পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার একপর্যায়ে নৌপথ দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

গতকাল কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে দেখা যায়, ভোর থেকে ঢাকামুখী লোকজন মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, ইজিবাইকে করে ঘাট এলাকায় আসছেন। পরে গাদাগাদি করে তাঁরা ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। ঢাকাগামী এসব যাত্রীর বেশির ভাগই শ্রমজীবী। দুপুর ১২টার পর থেকে ঘাটের প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ সময় হাতমাইকে যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের ফিরে যেতে অনুরোধ জানায় পুলিশ। এরপরই কমতে থাকে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা।

ঢাকা থেকে আসা পিরোজপুরগামী যাত্রী জ্যোৎস্না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভয়ে দেশের বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আবার সামনে ঈদ। কষ্ট হলেও সবকিছু চিন্তা করেই বাড়ি যাচ্ছি।’

ঢাকাগামী যাত্রী পোশাকশ্রমিক আবুল কালাম বলেন, ‘এক মাস তো বাড়িতে বসা ছিলাম। এখন ঢাকায় গিয়া কিছু আয় না করতে পারলে ঈদে বাড়িতে কী নিমু। তাই ঢাকায় যাচ্ছি। কলকারখানার কামে যোগ দিমু।’

গতকাল বেলা তিনটায় কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) নাসির উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটে সকাল থেকে যাত্রীদের খুব চাপ ছিল। উভয় ঘাটেই যানজট লেগে ছিল। তাঁরা দুপুর ১২টার পর থেকে কোনো ফেরিতে একটিও ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রী উঠতে দেননি। শিমুলিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

ঘাট সূত্র জানায়, নৌপথে চলাচলকারী ১৭টি ফেরির মধ্যে ১০টির মতো চলাচল করছে।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতকাল বিকেল থেকে আমরা সব কটি ফেরি বন্ধ করে দিয়েছি। কোনো জরুরি প্রয়োজনেও ফেরি ছাড়া হবে না। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে আবার ফেরি চলাচল শুরু করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের তুলনায় আজ (সোমবার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ সবচেয়ে বেশি ছিল। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আজ ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রবেশ করেছে।’

>

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছিল উপচে পড়া ভিড়। পরিস্থিতি সামলাতে নৌপথ দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, রাজধানী ছেড়ে আসা হাজারো মানুষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাচ্ছেন। আবার রাজধানীর দিকেও ছুটছেন অসংখ্য মানুষ।

ঢাকার সাভারে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার রিফাত হোসেন। সাধারণ ছুটির পর থেকে ব্যবসা বন্ধ থাকায় অনেকটা বেকার হয়ে পড়েন। তিনি গত রোববার দিবাগত রাতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে সাভার থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পৌঁছাতে সময় লেগে যায় চার ঘণ্টা। ফেরিতে নদী পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়া পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। খাওয়াদাওয়া কীভাবে করব? ঢাকাতে আর থাকতে পারছি না।’

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ বলেন, নৌপথ বন্ধের আশঙ্কায় ভোররাত থেকে দৌলতদিয়ায় মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। পাটুরিয়া ঘাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষের চাপ পড়ে বেশি। নদী পাড়ি দিয়ে তাঁরা দৌলতদিয়ায় পৌঁছালে ঢাকাগামী মানুষ মিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি সামলাতে দুপুর ১২টার পর পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে দুপুর ১২টা থেকে ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অতি জরুরি গাড়ি রাতে পার করার চিন্তা আছে।