শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথ

যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়, লঞ্চ-স্পিডবোটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পারাপার করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছে না লঞ্চমালিক কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার বিকেলে মাদারীপুরের বাংলাবাজার লঞ্চঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীকাল সোমবার থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তাই লকডাউনের এক দিন আগেই রাজধানী ছেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। আজ রোববার সকাল থেকেই মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এদিকে নৌযানগুলোয় ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হলেও লঞ্চ ও স্পিডবোটে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই ছিল না। উভয় ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে যাত্রীদের সচেতন করলেও বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে ছিল না মাস্ক, তাঁদের মধ্যে ছিল না কোনো সামাজিক দূরত্বও।

রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি লঞ্চে ছিল উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীরা গাদাগাদি করে পদ্মা পারাপার হচ্ছে। বাংলাবাজার ঘাটেও ছিল ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়। মূলত যাঁরা ঢাকায় বসবাস করেন, তাঁরাই ঢাকায় ফিরছিলেন।

উভয় দিকের যাত্রীদের ভিড় সামলাতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বেশির ভাগ যাত্রীর মাস্ক ছিল ব্যাগে ও পকেটে। অন্যদিকে বাংলাবাজার ঘাটে বাস কাউন্টারে যাত্রীদের টিকিট নিতে লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। দূরপাল্লার বাস, মাইক্রোবাসেও ছিল যাত্রীদের ভিড়। তবে খুলনা ও বরিশালগামী কিছু বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী বসানো হলেও বাস ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ।

বরিশালগামী যাত্রী আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লকডাউনের ছুটিতে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। পরিবহন, লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় বাড়ায় ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। লঞ্চ ও স্পিডবোটে ভাড়া ৬০ ভাগ বেশি নেওয়া হচ্ছে, অথচ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আগের মতোই যাত্রী তোলা হচ্ছে। তবে বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানোর বদলে দ্বিগুণ নিচ্ছে। ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই।’

বরগুনাগামী যাত্রী আক্কাস ঢালী বলেন, ‘আমি ফুটপাতে মালামাল বিক্রি করি। লকডাউন শুরু হলে ঢাকায় কোনো কাজ করার থাকবে না। সাত দিনের লকডাউনে তো বাইরে বের হইতে দিবে না। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি।’

গোপালগঞ্জগামী যাত্রী শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘লঞ্চে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। প্রচুর ভিড়। এত যাত্রীর ভিড়ে কি আর স্বাস্থ্যবিধি মানা যায়? লকডাউনে তো আবার সব বন্ধ থাকবে। তাই আজ ঝুঁকি নিয়েই পদ্মা পার হলাম।’

বিআইডব্লিউটিএর লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘লঞ্চ ও স্পিডবোটঘাটে সকাল থেকেই যাত্রীর চাপ বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবাইকে হ্যান্ডমাইকে সচেতন করা হচ্ছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে ওঠানো হচ্ছে। শিমুলিয়া থেকে আসা লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী না তুললে আমরা এই পাড়ে কী করতে পারি? আমরা তো লঞ্চ ঘাটে এলে ওপারে ফিরিয়ে দিতে পারি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ঘাটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুপুরের পর প্রচণ্ড ভিড় বেড়েছে। যাত্রীদের চাপে লঞ্চঘাটের পন্টুনে দাঁড়ানোর একটুও জায়গা নেই। এত ভিড় ঈদের আগে হয়। এত এত ভিড় সামলাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়।’

বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার ভোর থেকে আগামী সাত দিন সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে উভয় ঘাটে দুটি ছোট ফেরি চালু রাখা হবে। এ ছাড়া রাত দুইটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার হবে।

এ ব্যাপারে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ফেরিতে যাত্রীর চাপ মোটামুটি থাকলেও ছোট গাড়ির চাপ খুব বেশি। তাই উভয় ঘাটেই লাইনে অসংখ্য গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় আছে। সোমবার ভোর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজনে দুটি ফেরি চলবে।

বিকেল পাঁচটায় বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য দিনের তুলনায় রোববার যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ বেশি। প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস পারাপারের অপেক্ষায় আছে ৩৫০টি। বাস আছে ২০টি ও পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে ৪০০টি। শিমুলিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। উভয় ঘাটেই চাপ তুলনামূলক বেশি। আমরা গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নজরে রেখেছি। এ ছাড়া কেউ বর্ধিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’