যমুনা চরে পেঁয়াজ চাষে সাফল্য

করতোয়া নদীর তীরে পেঁয়াজের খেতে কাজ করছেন একদল নারী। গত রোববার বেলা ১১টায় বগুড়া সদর উপজেলার মহিষাবান গ্রামের চাকদহ এলাকায়। প্রথম আলো
করতোয়া নদীর তীরে পেঁয়াজের খেতে কাজ করছেন একদল নারী। গত রোববার বেলা ১১টায় বগুড়া সদর উপজেলার মহিষাবান গ্রামের চাকদহ এলাকায়।  প্রথম আলো

বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর বালুচরে এবারই প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা। বর্ষা মৌসুমে বালুচরে পলিমাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া এ বছর বাজারদর ভালো পাওয়ার আশায় এলাকার ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকেরা ঝুঁকেছেন পেঁয়াজ চাষে।

উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলার ভান্ডার বাড়ি ইউনিয়নের বহমান যমুনা নদীর পূর্ব পাশে বৈশাখী, রাধানগর, নিউ সারিয়াকান্দি, বথুয়ারভিটা, পুকুরিয়া, শহড়াবাড়িসহ ছয়টি চর রয়েছে। গত নভেম্বর থেকে যমুনা নদীতে পানি কমে গিয়ে জেগে উঠেছে এসব চর। স্থানীয় কৃষকেরা এসব বালুচরের জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে অন্য ফসলের পাশাপাশি রোপণ করেন পেঁয়াজের চারা। এ বছর বাজারমূল্য বেশি থাকায় ৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ করা হয়েছিল ৪৫ হেক্টরে।

যমুনা নদীর চর এলাকার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন, শাহা আলী, নবীর উদ্দীনসহ ১০-১২ জন পেঁয়াজচাষি জানান, প্রতিবছর নদীর পানি শুকিয়ে গেলে এসব বালুচরে অন্য ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজের চাষ করা হয়। তবে পেঁয়াজ চাষে ব্যয় হয় বেশি। সেই তুলনায় তেমনটি লাভ হয় না। এ বছর আবার গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজের চাহিদা ও দাম বেশি। তাই অনেক কৃষক ঝুঁকেছেন পেঁয়াজ চাষে।

পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ হবে। বাজারদর ভালো পাওয়া পেলে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে তাঁদের। পেঁয়াজ বিক্রির টাকায় এসব ভূমিহীন কৃষক কমপক্ষে ছয় মাসের চাল-ডাল কিনতে পারবেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। অনেক স্থান দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে কৃষক-কৃষাণীরা যাচ্ছেন চরে রোপণ করা পেঁয়াজের জমিতে। চর এলাকা ছেয়ে গেছে সবুজ পেঁয়াজ গাছে। এ সময় কয়েকজন কৃষক বলেন, আগে সারা বছর যমুনা নদীতে পানিপ্রবাহ থাকত। তাই নদী পারাপারে সমস্যা ছিল। এবার নদীতে পানি নেই। জেগেছে ধু ধু চর। তাই তীরবর্তী ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষিরা এসব চর দখলে নিয়ে ঝুঁকেছেন চাষাবাদে। অন্য ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষ করছেন তাঁরা।

পেঁয়াজচাষি পুকুরিয়া গ্রামের সোহরাব আলী জানান, তাঁর জমি নেই। পরিবারে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তিনি চাষাবাদ করেন। বর্তমানে যমুনার চরে ৩০ শতক জমিতে অন্য ফসলের সঙ্গে পেঁয়াজ চাষ করেছেন তিনি। হেঁটে নদী পারাপারে সুবিধা হওয়ায় পরিবারের অন্য সদস্যরা এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করছেন।

রঘুনাথপুর গ্রামের চাষি ইউনুছ আলী জানান, ভরা বর্ষায় পলিমাটিতে তৈরি এ জমি। এই পলি পেঁয়াজখেতের জন্য উপযোগী। পেঁয়াজ চাষে পলিযুক্ত জমিতে সার বেশি লাগে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশাও করছেন। তবে এ মুহূর্তে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা। তাই বাজারদর নিয়ে তিনি কিছুটা শঙ্কিত।

উপজেলার ভান্ডার বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম বলেন, আগে যমুনা নদীতে সারা বছর পানির স্রোত থাকত। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে পানি নেই। চর এলাকার প্রান্তিক ও ভূমিহীন চাষিরা পেঁয়াজ ছাড়াও নানা জাতের ফসল করেছেন। ফসলের বাজারদর ভালো পেলে সচ্ছলতার মুখ দেখবেন তাঁরা।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুস ছোবাহান জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। এবার যমুনার চরে প্রায় ৪৫ হেক্টর থেকে বেড়ে ৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। বাজারদর ভালো পেলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দীপ্তি রানী রায় বলেন, প্রত্যাশিত উৎপাদন পেলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ দেশের অন্য এলাকাতেও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।