‘যখন বাড়িতে আগুন দেয়, বাচ্চা নিয়ে জমিতে লুকিয়ে ছিলাম’

সব কিছু পুড়ে শেষ। তছনছ হয়েছে সংসার। গতকাল রাতের হামলা–সহিংসতার কথা মনে করে কান্না থামাতে পারছেন না রংপুরের পীরগঞ্জের বড়করিমপুর এলাকার এই নারী
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা বিকেল রায়। গতকাল রোববার রাতের সহিংসতার ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, যখন বাড়িঘরে আগুন দিতে শুরু করে হামলাকারীরা, তখন তিনি শিশুসন্তানকে নিয়ে পাশের খেতে লুকিয়ে ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘যখন বাড়িতে আগুন দেয়, তখন আমি বাচ্চা নিয়ে জমিতে লুকিয়ে ছিলাম। বাড়ির সব টাকাপয়সা নিয়ে গেছে। বাচ্চাটার খাওয়ার কিছু নাই।’

ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি

গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মন্দির ও বসতবাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর থেকে বাসিন্দারা আতঙ্কে সময় পার করছেন।

কিরোন রানি নামের এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘এই দ্যাশোত থাকার চাইতে মরি যাওয়াই ভালো। ভোরে আসি দেখি, কিচ্চু নাই। সোনা দানাসহ সব নিসে।’

নয়নী রাণী বলেন, সামনে মেয়ের বিয়ে। বিয়ের জন্য কিছু জিনিস কেনা হয়েছিল। শাড়ি-গয়না সব শেষ হয়ে গেছে। ঘরে থাকা ১ লাখ টাকাও লুট হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবগুলো ঘরবাড়িতে গতকাল রাতের হামলা, ভাঙচুর আর আগুন লাগানোর চিহ্ন। এর মধ্যে আগুনে একেবারে পুড়ে গেছে ১৫টি পরিবারের ২১টি বাড়ির সবকিছু। সব মিলিয়ে গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলাকারীরা গরু–ছাগল নিয়ে গেছে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান দেখছেন কনিকা রাণী। বড়করিমপুর, পীরগঞ্জ, রংপুর

গ্রামজুড়ে টহল দিচ্ছেন পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, হামলাকারীদের কোনো ছাড় নেই। তারা হানাদার বাহিনীর মতো বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।