দ্বিতীয় দফায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। সাতটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের মধ্যে মাত্র একটিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বাকি পাঁচটিতে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের জয় হয়েছে। একটি ইউপির ফল স্থগিত রয়েছে।
পাঁচটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তিনটি ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট নিয়ে। এ তিনটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পেয়েছেন ১৫৮, ৩৭৬ ও ৩৯২ ভোট।
ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ স্পষ্টতই দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতাদের বক্তব্য, টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ায় এমন লজ্জাজনক ভরাডুবি। অপর একটি পক্ষ বলছে, আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট চাইলেও গোপনে তাঁরা নৌকার চরম বিরোধিতা করেছেন, এ কারণে এমন লজ্জাজনক পরাজয়।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার সাতটি ইউপিতে ভোট হয়। এর মধ্যে গামারীতলা ইউপিতে নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান পেয়েছেন মাত্র ১৫৮ ভোট। এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান ২ হাজার ৪৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। অপর বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মান্নান পেয়েছেন ২ হাজার ২৫৭ ভোট।
গোয়াতলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলমগীর হোসেন পেয়েছেন ৩৭৬ ভোট। এ ইউনিয়নে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত জাকিরুল ইসলাম তালুকদার ৫ হাজার ৭০১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামছুর রশিদ পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৮৫ ভোট।
নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে ধোবাউড়ার ঘোঁষগাঁও ইউপিতেও। এ ইউপিতে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক পেয়েছেন মাত্র ৩৯২ ভোট। এ ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ ৫ হাজার ৯২৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরহাদ আল রাজি পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৯২ ভোট।
নৌকার প্রার্থীদের এমন হারের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধকে দায়ী করছেন সাধারণ ভোটার ও নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয় ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ্বাস। বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন ধোবাউড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ডেভিড রানা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় অংশ প্রকাশ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়। এর পর থেকে বিরোধ বাড়তেই থাকে। দলীয় কর্মসূচিগুলো পৃথকভাবে পালিত হয়।
নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, ইউপি নির্বাচনের জন্য দুটি পক্ষ পৃথকভাবে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে প্রস্তাব করে। সাতটি ইউপির সব কটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানার পক্ষের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। যে কারণে প্রিয়তোষ বিশ্বাসের পক্ষের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট চাইলেও গোপনে চরম বিরোধিতা করেছেন বলে অভিযোগ। এর কারণে নৌকার প্রার্থীদের এমন লজ্জাজনক পরাজয়।
প্রিয়তোষ বিশ্বাস বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন সঠিক ছিল না। টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে আমি দলীয় প্রার্থী হলে একটি পক্ষ ভোটারদের কাছে প্রচার করেছিল নৌকায় ভোট দেবেন না। ওই প্রচার ভোটাররা এখনো ভুলেনি।’
ডেভিড রানা জানান, দলের কোন্দলের কারণে একটি পক্ষ প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চাইলেও রাতের অন্ধকারে তাঁরা বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা একটা পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়েন। শেষ দিকে ওই প্রার্থীরা মাঠে ছিলেন না।