তিন মাস আগে গভীর রাতে মুঠোফোনে কল আসে এক কিশোরীর। নম্বরটি অপরিচিত। ধরবে কি ধরবে না, এমন ভাবনা থেকে শেষ পর্যন্ত কলটি ধরেই ফেলে ওই কিশোরী। এর পর থেকে টানা দুই সপ্তাহ তাদের কথোপকথন চলে, প্রেম হয়। একজন অপরজনকে দেখার ইচ্ছা জাগে। স্বপ্ন দেখে ঘর বাঁধার। প্রথম দর্শনের তারিখ নির্ধারিত হয় চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টা। স্থান কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার দ্বাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড।
সময়মতো যথাস্থানে উপস্থিত হয় ওই কিশোরী। পরিচিত হওয়ার পর কিশোরীর মোহভঙ্গ হয়। দেখতে পায়, কথিত প্রেমিকের বয়স তার তিন গুণ। এ অবস্থায় ওই কিশোরী ফিরে যেতে চায়। কিন্তু সে আর বাড়িতে ফিরতে পারেনি। মুখে রুমাল চেপে গাড়িতে উঠিয়ে অজানা স্থানে নিয়ে যান প্রেমিক।
কিশোরীর অভিযোগ, অজানা স্থানটি ছিল বেশ নির্জন। সেখানে তাকে আড়াই মাস আটকে রেখে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন চালান সমীর মিয়া (৫০) নামের ওই ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি কুলিয়ারচর শহরের তাতারকান্দিতে, পেশা পাদুকাশ্রমিক।
এ ঘটনায় মুঠোফোনের ফাঁদে ফেলে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে আজ রোববার বিকেলে ওই কিশোরীর মা কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সমীরকে একমাত্র আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার ও কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কিশোরী সমীরকে আগে চিনত না। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে কিশোরীর মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন। অভাবের কারণে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে মাধ্যমিকে পড়ার সুযোগ হয়নি কিশোরীর। ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে সমীরের দেওয়া কলের সূত্র ধরে পরিচয় হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি দেখা হওয়ার আগপর্যন্ত কিশোরীর ধারণা ছিল, সমীর অবিবাহিত ও তরুণ। পরিচয় হওয়ার পর মোহভঙ্গ হলে কিশোরী ফিরে আসতে চায়। কিন্তু সেখানে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। দুজন সহযোগী নিয়ে ওই কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে যান সমীর। পরে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার একটি নির্জন স্থানে একটি ঘরে তাকে আটকে রাখেন। সেখানে টানা আড়াই মাস তাঁকে ধর্ষণ করেন সমীর। কোথাও ব্যতিক্রম হলে কিশোরীকে শারীরিক নির্যাতন করা হতো।
এ অবস্থায় মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়ে ওই কিশোরীর মা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিশোরীর নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে সমীরও এলাকাছাড়া। তাঁর ফোনও বন্ধ। স্ত্রী ও সন্তানেরাও সমীরের সন্ধান করছিলেন। ঈদের কয়েক দিন আগে এলাকাবাসীর সন্দেহ যায় সমীরের দিকে। ঈদের এক দিন আগে সমীর এলাকায় ফেরেন। তখন ওই কিশোরীর মা থানায় গিয়ে সমীরকে ঘিরে সন্দেহের কথা পুলিশকে জানান। পুলিশ সমীরের পরিবারকে এ নিয়ে চাপ দেয়। এ অবস্থায় ঈদের পরদিন ওই কিশোরী গ্রামে ফিরে আসে এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে পুরো বিষয়টি খুলে বলে।
কিশোরী ফিরে আসার পর সমীর আবারও গা ঢাকা দেন। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ হয়ে যায়। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ওই কিশোরী বলে, ‘আমি পরে বুঝতে পারি, কলটি আমার কাছে অপরিচিত হলেও সমীর পরিকল্পিতভাবে সেই দিন কল দিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলেছিলেন। তাকে অচেতন করে ধর্ষণ করা হতো। তার ধারণা, শুধু সমীর তাকে ধর্ষণ করেননি, সহযোগীরাও করেছেন।
কিশোরীর দাবি, তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর সমীর আর বাড়িতে ফেরেননি। পুরো কাজে তাঁর তিনজন সহযোগী ছিলেন। এবার ঈদে বাড়িতে আসবে বলে তিন সহযোগীর জিম্মায় তাকে রেখে সমীর চলে আসেন। সমীর চলে আসার পর সহযোগীদের কাছে কান্নাকাটি করে তাঁদের সহযোগিতায় ওই স্থান থেকে মুক্ত হয় সে।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তুফা বলেন, অপহরণ করে নিয়ে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আজ মামলা হয়েছে। একমাত্র অভিযুক্ত সমীর মিয়া এখন এলাকাছাড়া। তাঁকে ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। এরই মধ্যে ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।