কুষ্টিয়ার মিলগুলো চালের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে। গত রোববার বিভিন্ন ধরনের চালের কেজিপ্রতি দর এক টাকা করে বাড়ায় মিলগুলো। নতুন দাম অনুযায়ী সরু মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৫২-৫৩ টাকা। কাজললতা ৪৮ টাকা। বিআর আটাশ ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ল এমন এক পরিস্থিতিতে, যখন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন মূল্য নির্ধারণ নিয়ে মিলমালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে। শুক্রবার এক দফা বৈঠকের পর গত রোববার দ্বিতীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠক চলাকালেই মিলগেটে বাড়তি দামে বিক্রি শুরু করে কয়েকটি চালকল।
এক সপ্তাহ আগে চালের দাম এক থেকে দুই টাকা কম ছিল। মূলত ব্যবসায়ীরা দেড় মাস ধরে ধাপে ধাপে চালের দাম বাড়িয়েছেন। যেমন গত মাসের শুরুতে সরু মিনিকেট চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০ টাকা। এরপর ৫ আগস্ট, ২২ সেপ্টেম্বর ও সর্বশেষ গত রোববার দাম কেজিপ্রতি এক টাকা করে বাড়ানো হয়।
কুষ্টিয়ায় চালের মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়ে সারা দেশে। কারণ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা খাজানগর এলাকা দেশের চালের দ্বিতীয় প্রধান মোকাম। দাম বাড়তে থাকায় গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন মূল্য পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত কমিটি শুক্রবার ও রোববার দুই দফা বৈঠক করে। এতে চালকল মালিক সমিতির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
মিলমালিকেরা প্রথম বৈঠকে নানা যুক্তি দেখান। দাবি করেন, তাঁরা ৭৫ শতাংশ ধান উত্তরবঙ্গ থেকে কিনে আনেন। এরপর রয়েছে উৎপাদন খরচ। সব মিলিয়ে যে ব্যয় দাঁড়ায়, তাতে প্রতি কেজি ৫৪ টাকার নিচে মিনিকেট চাল বিক্রি করা সম্ভব নয়। তবে জেলা প্রশাসন থেকে মিলগেটে মিনিকেট চালের দাম প্রতি কেজি ৫১ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তখন মিলমালিকেরা কোনো কিছু না বলেই বৈঠকস্থল ছাড়েন।
কমিটি গত রোববার আবারও বৈঠকে বসে। এতে চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রশীদসহ অন্তত ২০ জন মিলমালিক উপস্থিত ছিলেন। চার ঘণ্টা আলোচনার পর একটি মূল্য পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অবশ্য চালকলমালিকেরা সিদ্ধান্ত না মেনে আবারও সভা ছেড়ে চলে যান।
এই সভা যখন চলছিল, তখনই মিলগেটে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি এক টাকা বাড়ানো হয়। গতকাল সোমবার কুষ্টিয়া পৌর বাজারে গিয়ে বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে দেখা যায়। জেলার বাজার পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামও মূল্য বেড়েছে বলে জানান।
দেশে ২০১৭ সালের পর এখন চালের দাম সবচেয়ে বেশি। ওই বছর উৎপাদন কম হয়েছিল। কিন্তু এ বছর উৎপাদন বেড়েছে।
পর্যালোচনা কমিটির কাজ চলার মধ্যেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কেন দাম আবার বাড়ল, সে বিষয়ে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।