মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ড্রেজিংকৃত পশুর নদের বালু ফেলে কৃষিজমির ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ তুলে কৃষকদের জীবিকা রক্ষার দাবিতে বাগেরহাটে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় ভূমিমালিকেরা। এ সময় তাঁরা বালু রাখতে বিকল্প ব্যবস্থাপনার দাবি জানান। পাশাপাশি ঠিকাদারের গুন্ডা লাগিয়ে জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা।
আজ বুধবার দুপুরে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের জমির মালিকদের ব্যানারে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন জমির মালিকেরা। এ সময় সেখানে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক জমির মালিক উপস্থিত ছিলেন। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও ঘোষণা দেন তাঁরা।
ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের ভাড়া করা গুন্ডারা কৃষকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে গ্রামবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা এলাকার মো. আলম গাজী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে চিলা ইউনিয়নের সুন্দুরতলা, তেলিখালী, আমতলা, গাববুনিয়া, কলাতলা, কেয়াবুনিয়া ও চিলা গ্রামে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছি। মোংলা বন্দরের ইনার বার ড্রেজিংয়ের বালু আমাদের কৃষিজমি ও বসতবাড়িতে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, এই সাত গ্রামের মানুষের প্রায় ৭০০ একর কৃষিখেতে এই বালু ফেলা হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ একর জমি ঘিরে নিয়েছে তারা। আমরা বাধা দিলে ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের ভাড়া করা গুন্ডারা আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে গ্রামবাসী।’
সরকার হয়তো দুই বছর বা তিন বছর ভাড়ার টাকা দেবে, কিন্তু বালু ভরাট করা জায়গায় আগামী ৫০ বছরেও কোনো ফসল হবে না। তাহলে দুই বছরের টাকায় আমাদের কী হবে? আমরা কোনো হুমকি-ধমকি মানি না। প্রয়োজনে জীবন দেব। তবু বাপ-দাদার জমিতে বালু ভরাট করতে দেব না।সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমাদের না জানিয়ে জমিতে বালু ফেলার ব্যবস্থা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমরা যখন বাধা দিয়েছি, তখন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এক একর জমির জন্য ২০ হাজার টাকা বার্ষিক ভাড়া দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের এসব গ্রামে এক একর জমিতে বছরে আমরা এর থেকে অনেক বেশি টাকা আয় করি। কোনোভাবেই এক একর জমির বার্ষিক ভাড়া ২০ হাজার টাকা হতে পারে না। ৭০০ একর জমিতে বালু ফেললে কয়েক শ কৃষক নিঃস্ব হয়ে যাবেন। না খেয়ে মরতে হবে আমাদের। বন্দরের উন্নয়নের জন্য যদি আমাদের জমি প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকার অধিগ্রহণ করে নিক। কিন্তু জমি ভাড়া নিয়ে সারা জীবনের জন্য জমিকে অনাবাদি বানাতে চাই না।’
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা বলেন, ‘সরকার হয়তো দুই বছর বা তিন বছর ভাড়ার টাকা দেবে, কিন্তু বালু ভরাট করা জায়গায় আগামী ৫০ বছরেও কোনো ফসল হবে না। তাহলে দুই বছরের টাকায় আমাদের কী হবে? আমরা কোনো হুমকি-ধমকি মানি না। প্রয়োজনে জীবন দেব। তবু বাপ-দাদার জমিতে বালু ভরাট করতে দেব না।’
ভূমি মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) ও ইনার বার ড্রেজিংয়ের প্রকল্প পরিচালক শেখ শওকত আলী আজ রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে নানা প্রকল্প নিয়েছে, যা এগিয়ে নিতেই মোংলা বন্দরকে আরও বেশি গতিশীল করা প্রয়োজন। এ জন্যই এই খনন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটা শেষ হলে বড় জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারবে। ড্রেজিং করা বালু ফেলার জন্য তাঁরা যে ৭০০ একর জমি নির্ধারণ করেছেন তার বড় একটি অংশের মলিক বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী। তাদের সেখানে বালু ফেলতে কোনো আপত্তি নেই। অল্প কিছু লোকের হয়তো আপত্তি আছে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।