মেয়াদ শেষ, তবু হচ্ছে না সেতু

সেতুটি নির্মাণ শুরু হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। এত দিনেও কাজ শেষ হয়নি। বাধ্য হয়ে পাশে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে লোকজন। কিন্তু এর ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহন করা যায় না। গত বুধবার কাউনিয়ার বকুলতলা এলাকায় মরা তিস্তায়। ছবি: প্রথম আলো
সেতুটি নির্মাণ শুরু হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। এত দিনেও কাজ শেষ হয়নি। বাধ্য হয়ে পাশে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে লোকজন। কিন্তু এর ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহন করা যায় না। গত বুধবার কাউনিয়ার বকুলতলা এলাকায় মরা তিস্তায়।  ছবি: প্রথম আলো

মরা তিস্তা নদের ওপর সাঁকো বানিয়ে ১৬ বছর ধরে চলাচল করত আট গ্রামের মানুষ। প্রায় দুই বছর আগে সেখানে সেতু নির্মাণ শুরু হয়। এ কারণে সাঁকোটি ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু এত দিনেও কাজ শেষ হয়নি। বাধ্য হয়ে আরেকটি সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছে লোকজন।

এ অবস্থা রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছের বকুলতলা এলাকায়। সেতুটি না হওয়ায় এর আশপাশের প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাঁকোটির ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারলেও পণ্য পরিবহন করা যায় না।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, লোকজনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংসদ ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বকুলতলা এলাকায় সেতুটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ঠিকাদার আনিসুর রহমান কাজটি পান। কাজের মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। কিন্তু পৌনে দুই বছর হতে চললেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত সেতুটির ৬০-৬৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৫০ মিটার।

হারাগাছ ইউনিয়নের নাজিরদহ, পল্লীমারী, চীনাতলী, পাগলারহাট, মিলনবাজার, একতা, ঠিকানাবাজার ও হকেরহাটসহ আটটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ ওই পথ দিয়ে চলাচল করে। তারা জানায়, বকুলতলা এলাকায় মরা তিস্তার ওপর স্থানীয় জনগণ প্রায় ১৬ বছর আগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। প্রতি বছর সাঁকোটি তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে সংস্কার করতেন। সেই সাঁকো ভেঙে দুই বছর আগে সেতু নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু এত দিনেও সেতু হয়নি। বাধ্য হয়ে পাশে আরেকটি সাঁকো তৈরি করে চলাচল চলছে।

নাজিরদহ গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, অনেক আশা ছিল সেতুটি নির্মাণ হবে। কিন্তু দুই বছর হতে চলল সেতুটির এখনো নির্মাণ শেষ হলো না।

একতা বাজার এলাকার আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাজারঘাটসহ শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র উপায় হলো এই বাঁশের সেতু।

গত বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির মাঝখানে দুটি পিলার হয়েছে। পিলারের দুই দিকের কিছু অংশে চলাচলের জন্য পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। তবে মাঝখানের বড় অংশে এখনো পাটাতন নির্মাণ করা হয়নি। পাশের সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। নদে পানি কম থাকায় পানি ডিঙিয়ে পণ্যবোঝাই ঘোড়ার গাড়ি চলছে।

হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান বলেন, এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতু নির্মাণ শুরু হলেও তার আবার ধীর গতি। এর ফলে জনগণের দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদার আনিসুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। তবে সেতুটির নির্মাণকাজের ব্যবস্থাপক রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘বর্ষার কারণে নির্মাণ বন্ধ ছিল। আশা করি, খুব শিগগির আবার কাজ শুরু করা হবে। সেতুটির ৬০-৬৫ শতাংশ কাজ হয়েছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ জায়েদ বিন মাসুদ বলেন, ‘আমি সবে এখানে যোগ দিয়েছি। সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার তাগিদ দেব।’