নোয়াখালীর সেনবাগে পৌরসভার মেয়রের নাম আগে থাকায় ৪৩তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছেন সেনবাগ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. গোলাম কবির। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। এ সময় সেখানে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সেনবাগ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে দুই দিনব্যাপী ৪৩তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ এবং বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সেনবাগ পৌরসভার মেয়র আবু নাছের, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. গোলাম কবির ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়াম সুলতানা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ বেলা ১১টার দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গোলাম কবির দলবল নিয়ে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার পর থেকেই তিনি ব্যানারে অতিথিদের নামের তালিকা নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেন। ব্যানারে তাঁর নামের আগে মেয়রের নাম কেন দেওয়া হয়েছে, এটা নিয়ে তিনি চিৎকার–চেঁচামেচি করেন। তিনি অনুষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিনকে ব্যানার নামিয়ে ফেলতে বলেন। একপর্যায়ে গোলাম কবির নিজেই মঞ্চে উঠে ব্যানারটি টেনে ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় অনুষ্ঠান কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
সরকারি প্রটোকল অনুসারে ভাইস চেয়ারম্যানের ওপরে পৌরসভার মেয়রের অবস্থান। ভাইস চেয়ারম্যান তা না মেনে সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, জেলা প্রশাসক
ইউএনও সাইফুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পর ভাইস চেয়ারম্যান সেখানে আসেন। ব্যানারে তাঁর নাম মেয়রের নামের পরে থাকায় তিনি মঞ্চে উঠে ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলেন এবং পদদলিত করেন। পরে আয়োজকদের পক্ষ থেকে একজন পুনরায় ব্যানার লাগাতে গেলে ওই ব্যক্তিসহ সবাইকে হুমকি-ধমকি দেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নেবে।
সাইফুল ইসলাম মজুমদার আরও বলেন, সম্ভবত মেয়রের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত বিরোধ আছে। এ কারণে তিনি গত কয়েকটি অনুষ্ঠানে মেয়রের নামের পরে তাঁর নাম দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সরকারি প্রটোকল অনুযায়ী, ব্যানারে মেয়রের নাম আগে এবং তারপর ভাইস চেয়ারম্যানের নাম থাকবে। আর বক্তৃতায় ভাইস চেয়ারম্যানের পরে বক্তৃতা দেবেন মেয়র।
উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে আমার নাম আসার কথা। তা ছাড়া দুই ভাইস চেয়ারম্যানের পরে হবে মেয়রের নাম। নামগুলো উল্টাপাল্টা হওয়ার কারণে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ জন্য আমি বলেছি ব্যানার খুলে ফেলার জন্য।গোলাম কবির, ভাইস চেয়ারম্যান, সেনবাগ উপজেলা পরিষদ
জানতে চাইলে গোলাম কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনিয়মের কারণে ব্যানার খুলে প্রোগ্রাম (অনুষ্ঠান) করতে বলেছি। উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে আমার নাম আসার কথা। তা ছাড়া দুই ভাইস চেয়ারম্যানের পরে হবে মেয়রের নাম। নামগুলো উল্টাপাল্টা হওয়ার কারণে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ জন্য আমি বলেছি ব্যানার খুলে ফেলার জন্য। এটা “খ” শ্রেণির পৌরসভা। আর প্রোগ্রামটি ছিল উপজেলা প্রশাসনের, এটা পৌরসভার প্রোগ্রাম নয়।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান মনে করেন তিনি মেয়রের ওপরে। কিন্তু সরকারি প্রটোকল অনুসারে ভাইস চেয়ারম্যানের ওপরে পৌরসভার মেয়রের অবস্থান। ভাইস চেয়ারম্যান তা না মেনে সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।