সাবনূরের বাবা বাবুল মোল্লা নয় বছর ধরে অসুস্থ। হাঁপানির রোগী। মাঝে মধ্যে দিনমজুরের কাজ করেন। মা সাবিনা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। সপ্তম শ্রেণি থেকেই টিউশনি করিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছেন সাবনূর। এ বছর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সাবনূরের এখন একটাই চিন্তা কীভাবে মেডিকেলের পড়াশোনার খরচ চালাবেন।
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারকাঠি গ্রামের মেয়ে মোসা. সাবনূর। ২০১৯ সালে সাবনূর স্থানীয় কামারকাঠি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০২১ সালে স্বরূপকাঠি শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পান। তিন ভাইবোনের মধ্যে সাবনূর সবার বড়। তাঁর বাবা বাবুল মোল্লা এক সময় কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। তখন সংসারে অভাব ছিল না। নয় বছর আগে বাবুল মোল্লা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবুল মোল্লার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে পরিবারটি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বাবুলের স্ত্রী সাবিনা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারের হাল ধরেন।
সাবনূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা অসুস্থ। একটু সুস্থ হলে দিনমজুরের কাজ করেন। মা বাসাবাড়িতে কাজ করে আমাদের পাঁচ সদস্যের সংসার চালান। আমার ছোট বোন দশম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনার খরচ ও সংসার চালাতে গিয়ে মা এনজিও থেকে অনেক ঋণ করেছেন। এখনো মাঝে মধ্যে অনাহারে থাকতে হয় আমাদের। এখন আমি মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ কীভাবে চালাব তা নিয়ে চিন্তিত।’
সাবনূরের মা সাবিনা বেগম বলেন, মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এ জন্য তাঁরা সবাই খুশি। কিন্তু সাবনূরের পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলবে সে চিন্তায় মুখে হাসি আসে না। কদিন পর পর এনজিও লোকজন কিস্তির টাকার জন্য বাড়িতে আসেন। এসব নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।
বাবা বাবুল মোল্লা বলেন, ‘সাবনূর অভাবের মধ্যে থেকে ভালো ফলাফল করছে। আমি সুস্থ থাকলে হয়তো ছেলেমেয়েদের এত কষ্ট করতে হতো না।’
শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা সাবনূরকে দমাতে পারেনি। চেষ্টা ও মেধার কাছে দারিদ্র্য হার মেনেছে। সাবনূরের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আমিসহ শিক্ষকেরা তাঁকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। মেয়েটি যাতে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারে সে জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’