ধান কাটতে গিয়ে জমিতে চারটি বিড়ালসদৃশ প্রাণীর শাবক দেখতে পান লোকজন। বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেই সেগুলোকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। কিন্তু এক তরুণ শিক্ষার্থী এতে বাদ সাধেন। তিনি শাবকগুলো হত্যা করতে দেননি, বরং তাদের নিরাপত্তা দিয়ে খবর পাঠিয়েছেন গণমাধ্যমে এবং বন বিভাগের কার্যালয়ে।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের নলগাঁও গ্রামে আজ শুক্রবার দুপুরে জমিতে পাওয়া যায় শাবকগুলো। অনেকের মতো ওই জমির পাশে শাবকগুলো দেখতে উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাব্বির সরকার। তিনি ওই গ্রামের ইজ্জত আলীর ছেলে। লোকজন শাবকগুলো মেরে ফেলতে চাচ্ছিলেন জেনে তিনি তাতে বাধা দেন। নিজে তাদের দায়িত্ব নেন। শাবকগুলোর ছবি তুলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন সাব্বির। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জেনে যান, এগুলো মেছো বিড়ালের ছানা। ছানাগুলোর চোখ পুরোপুরি ফোটেনি। তিনি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করেন প্রথম আলো কার্যালয়ে। সেখান থেকে প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
চারটি শাবক পাওয়া গেছে। সেগুলো মেছো বিড়ালের শাবক। তাদের কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। শাবকগুলো যেখানে পাওয়া গেছে, সন্ধ্যায় সেখানেই ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সাব্বির সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেউ বুঝতে পারছিলাম না এগুলো কোন প্রাণীর ছানা। এরপর ইন্টারনেটে ফটো সার্চ অপশন ব্যবহার করে ছানাগুলোর ছবি যাচাই করে পরিচয় নিশ্চিত হই। অনেকেই এগুলোকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন। কিন্তু আমি জানি, এগুলো প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে। এদের বাঁচতে দিতে হবে। তাই বাঁচানোর উদ্যোগ নিই। প্রথম আলোয় জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে অনেক খবর পড়েছি। তাই বিষয়টি তাঁদের কার্যালয়ে জানাই। এরপর বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়।’
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন প্রথম আলোকে বলেন, ওই তরুণের সঙ্গে কথা হয়েছে। চারটি শাবক পাওয়া গেছে। সেগুলো মেছো বিড়ালের শাবক। সব কটি এখনো অনেক ছোট। তাদের কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। শাবকগুলো যেখানে পাওয়া গেছে, সন্ধ্যায় সেখানেই ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শাবকগুলোর মা তাঁদের নিয়ে যাবে। ওই তরুণের মতো এভাবে সবারই বন্য প্রাণীর বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার।