রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ

মুজিব বর্ষের নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ

নজির মোল্লার নির্দেশে তাঁর ভাই ফজল ও বোন রাশেদা লোকজন নিয়ে দেয়াল ভাঙচুর করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেন।

  • নির্মাণাধীন ওই ঘরের চারপাশে তিন ফুট উঁচু করে পাকা দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

  • অভিযুক্ত কলেজশিক্ষককে ডেকে ঘর পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন ইউএনও।

কলেজশিক্ষক পরিবারের লোকজন মুজিব বর্ষের পাকা ঘরের ভিত্তি ভেঙে এভাবে মাটিতে মিশিয়ে ফেলে রাখেন। গত বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষ্ণপট্টি এলাকায়

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় এক কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আন্ধারমানিক কৃষ্ণপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন চর আন্ধারমানিক এলাকার বাসিন্দা সেকেন মোল্লার ছেলে সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজির হোসেন মোল্লা, তাঁর ভাই চাল ব্যবসায়ী মো. ফজল মোল্লা, বোন রাশেদা খাতুন ও ভগ্নিপতি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন মণ্ডল। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ অনুযায়ী, উপজেলায় প্রথম দফায় ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে আরও ১০০টি ঘর বরাদ্দ আসলে কৃষ্ণপট্টি এলাকার আকরাম শেখ একটি ঘর বরাদ্দ পান। ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ২ শতাংশ জমিতে বারান্দাসহ দুটি শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউএনও এবং সদস্যসচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।

উপকারভোগী আকরাম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে অনেক কষ্টে ৭ শতাংশ জমি কেনেন তাঁর বাবা। ঘর বানাতে না পারায় বাবার মৃত্যুর পর মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে শ্রমিকের কাজ করে অন্যের বাড়িতে থাকেন। ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন থেকে তিনি মুজিব বর্ষ উপলক্ষে একটি ঘর বরাদ্দ পান। নির্মাণাধীন ওই ঘরের চারপাশে তিন ফুট উঁচু করে পাকা দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।

আকরাম শেখের অভিযোগ, ‘গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নজির মোল্লার নির্দেশে তাঁর ভাই ফজল ও বোন রাশেদা লোকজন নিয়ে মিস্ত্রিদের মারধর করে তাড়িয়ে দেন এবং ঘরের চারপাশের পাকা দেয়াল ভাঙচুর করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেন। আমাকে মারার জন্য খুঁজতে থাকলে ভয়ে দূরে ছিলাম। ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে রাতেই ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউএনও।’

নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজমিস্ত্রি নুরু সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই বিল্লাল সরদারসহ পাঁচজন সেখানে কাজ করছিলেন। নজির প্রফেসরের পরিবারের লোকজন সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে ভাঙচুর করেন। নিষেধ করলেও তাঁরা শোনেননি।’

অভিযুক্ত কলেজশিক্ষক নজির হোসেন মোল্লা বলেন, এটা মুজিব বর্ষের ঘর তাঁর ভাই-বোন বুঝতে পারেননি। ঘর ভাঙচুরের সময় তিনি ঘটনাস্থলেও ছিলেন না। এ ছাড়া যে জমির ওপর ঘর করা হচ্ছে, সেটা তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। তারপরও যেহেতু ভুল করে ফেলেছে, ওই জমির একদিকে ২ শতাংশ জমি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, আকরামের বাবার নামের জমি মিউটেশন (নামজারি) করা। ২ শতাংশ জমি লিখে দেওয়ার পর ঘরের কাজ শুরু হয়। না বুঝে প্রতিপক্ষ ভাঙচুর করেছে। এখন নতুন করে প্রতিপক্ষ জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সেখানেই ঘরের কাজ করা হবে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নির্মাণসামগ্রী পড়ে আছে। পাকা ডোয়ার সিমেন্ট-বালু মাখা ইটগুলো মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে ওই জমি আকরাম শেখের বাবার। অর্থের অভাবে ঘর বানাতে পারেননি।

পিআইও আবু সাঈদ মণ্ডল বলেন, এক সপ্তাহ আগে ঘর নির্মাণের জন্য সাড়ে পাঁচ হাজার ইট, ১৫০ ফুট খোয়া, ৪০০ ফুট বালু, ৬০ বস্তা সিমেন্ট পাঠানো হয়। ঘরের নিচে ঢালাইয়ের পর চারপাশের ডোয়া নির্মাণ করা হয়। মিস্ত্রিদের তাড়িয়ে দিয়ে সেই ডোয়া মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও আজিজুল হক খান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্ত কলেজশিক্ষক নজির হোসেন মোল্লাকে ডেকে বুধবারের মধ্যে ঘর পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’