মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ

মুখোমুখি গ্রামবাসী–প্রশাসন

দেবহাটার কালাবাড়িয়া গ্রামে ইছামতী খালের চরভরাটি জমিতে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলার মানচিত্র
সাতক্ষীরা জেলার মানচিত্র

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের কালাবাড়িয়া গ্রামে ভূমিহীনদের বসবাস করা ইছামতী খালের চরভরাটি জমিতে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামবাসী ও প্রশাসনের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গ্রামবাসীরা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে তাঁদের মারধর করেছেন ঠিকাদার ও প্রশাসনের লোকজন। আর প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, স্থানীয় লোকজন তাঁদের লোকজনের ওপর চড়াও হয়েছেন। গত বুধবার এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

গ্রামবাসীর ভাষ্য, ইছামতী খালের চরভরাটি জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছেন তাঁরা। সেখানে অন্য এলাকার মানুষের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে আপত্তি জানালে একপর্যায়ে ইউএনওর উপস্থিতিতে বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন
কর্মকর্তা–কর্মচারী, আনসার ভিডিপি ও ঠিকাদারের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় কালাবাড়িয়া গ্রামের নারী-পুরুষ মিলিয়ে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

তবে গ্রামবাসীকে মারধরের কথা অস্বীকার করে দেবহাটার ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, খাসজমিতে ঘর নির্মাণ করতে গেলে কালাবাড়িয়া গ্রামের নারী-পুরুষেরা বাধা দেন। এ সময় ঘর নির্মাণ করতে যাওয়া লোকজনকে গ্রামবাসী মারধর করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চার পুরুষ ধরে কালাবাড়িয়া ও আটশতবিঘা গ্রামের ইচ্ছামতী খালের চরভরাটিয়া জমিতে চার শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবার বসবাস করে আসছে। ১৯৯৮ সালে ভূমিহীন আন্দোলনের একপর্যায়ে ভূমিহীনদের জনপ্রতি ৩০ শতাংশ থেকে ১ একর খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। তবে ইচ্ছামতী খালের চরভরাটি জমির কিছু অংশও ব্যবহার করছিলেন ভূমিহীনেরা। তবে ওই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হওয়ায় বন্দোবস্ত দেয়নি জেলা প্রশাসন।

মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ নিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মুজিবর রহমান, চেয়ারম্যান, দেবহাটা উপজেলা পরিষদ

কালাবাড়িয়া গ্রামের শিফালী মাখাল ও রিংকু মাখাল বলেন, বুধবার সকালে ঘর নির্মাণ শুরু হয়। এতে গ্রামবাসীরা আপত্তি জানান। নির্মাণের দায়িত্বে থাকা দেবহাটার পিআইও কার্যালয়ের কর্মচারী খায়রুল ইসলাম ও ঠিকাদার ফারুখ হোসেন তাঁদের ওপর চড়াও হন। শুরু বাক্‌বিতণ্ডা। বিষয়টি ফুলিয়ে-ফাপিয়ে ইউএনওকে জানান খায়রুল। খবর পেয়ে ইউএনও পুলিশ, আনসার ও তাঁর কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গ্রামবাসী তাঁদের দখলে থাকা জমিতে ঘর করতে দেবেন না বলে জানালে বাক্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে পিআইও কার্যালয়ের কর্মচারী খায়রুলের নেতৃত্বে আনসার ও পুলিশ সদস্যরা গ্রামবাসীকে মারধর করেন। এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হন। একপর্যায়ে কাজ বন্ধ রেখে চলে যান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের লোকজন ও ঠিকাদার।

গতকাল সকালে কালাবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রভাষ মাখালের বাড়ির পেছনে ঘরের ভিত নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে অবস্থান করছেন খায়রুল ও ঠিকাদার ফারুখ হোসেন। আশপাশে দু–চারজন থাকলেও তাঁরা কোনো শব্দ করছেন না।

আগের দিন গ্রামবাসীকে মারধর করা প্রসঙ্গে পিআইও কার্যালয়ের কর্মচারী খায়রুল বলেন, ‘গ্রামবাসী ইউএনও স্যারের ওপর চড়াও হয়। স্যারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি মাত্র। এ সময় স্যারের সঙ্গে আমিও লাঞ্ছিত হই।’

দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ নিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইউএনও খালিদ হোসেন ছিদ্দিকী বলেন, স্থানীয় লোকজনের নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তখন গ্রামবাসী তাঁদের ওপর চড়াও হন। এ সময় পিআইও অফিসের কর্মচারী খায়রুল ও নির্মাণশ্রমিক কাওসার আলী জখম হন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নওয়াপাড়া চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।