রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী হাটে গিজ গিজ করছে মানুষ আর মানুষ। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। কেউ দরদাম করছেন, কেউ তামাক কিনে ভ্যানে তুলছেন। অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে ঝুঁকি নিয়ে চলছে তামাক কেনাবেচা। রোববার সকাল ৯টার দৃশ্য ছিল এটি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৮টি হাটবাজার আছে। তারাগঞ্জ বাজারের পর সবচেয়ে বড় হাট ইকরচালী। প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার এ হাট বসে। বাকি পাঁচ দিন বসে বাজার। এ হাটে পাঁচটি ইউনিয়নের উৎপাদিত তামাক সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।
রোববার সকাল ৯টায় সরেজমিন দেখা গেছে, ওই হাটে প্রায় সব ধরনের দোকান খোলা ছিল। মৌসুমি ফলের দোকান ও মুদিখানার দোকানেও ছিল যথেষ্ট ভিড়। হাটের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেকেই খোশগল্প করছেন। তাঁদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। আলুর ও সবজির বাজার ঘিরে কেনাকাটা করছেন প্রচুর মানুষ। মাংসের বাজার, হাঁসমুরগির বাজারে গিয়ে মনে হলো যেন কেনাকাটার উৎসব চলছে। গা ঘেঁষে হাঁস–মুরগি, মাংস কিনছেন অনেকে। হাটের তামাকের বাজারে গিজ গিজ করছে মানুষ। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। কেউ দরদাম করছেন, কেউ টাকা গুনছেন। আবার কেউ রিকশায় তামাক তুলছেন।
তামাক হাটের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ইকরচালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হাটে অনেক লোক। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কেউই তা মানছেন না। আমরা বললেও শুনছেন না। হাটে কার আগে কে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে পারে, সেই প্রতিযোগিতা চলছে।’
হাটে তামাক বিক্রি করতে আসা মেনানগর গ্রামের কৃষক আজারুল ইসলামের মুখে মাস্ক ছিল না। মাস্ক পরেননি কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘বাবা, মাস্ক তো পকেটোত আছে। গরমের তকনে মুখোত নাগাও নাই। মুখোত দিলে নিকাশ খড়ে যায়।’
ওই হাটের সবজি বাজারে কথা হয় ইকরচালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে। কেউ তো সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। অনেকে মুখে মাস্কও ব্যবহার করছেন না। ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের কিছু বলছেন না। হুড়াহুড়ি করে গা ঘেঁষে কেনাকাটা চলছে।’
সবজি ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের মধ্যে তো করোনার কোনো ভয় নেই। হাটে আগের মতোই মানুষের ভিড়। মাস্ক পরলেও তা থুতনিতে নামিয়ে রাখে। আমরা করব কী বলেন? আমাদের কথা তো কেউ কর্ণপাত করছে না। ঠেলাঠেলি করে সবজি কিনতেছে।’
বেলা ১১টার দিকে ওই হাটের একটি চায়ের দোকানে ৪০-৫০ জনকে চা পান করতে দেখা যায়। কারোর মুখেই মাস্ক নেই। প্রামাণিকপাড়া গ্রামের সোলেমান হোসেন নামের একজন বলেন, ‘মাস্ক তো ব্যাগোত আছে। চা খাওয়ার বসছে। করোনা নিয়ে গল্প করুছি। আল্লাহর রহমতে হামার মতো গরিব মানুষোক করোনা ধরিবার নেয়।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ইকরচালী বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী তুলছেন ইজিবাইকচালক এমদাদুল হক। মাস্ক ছাড়া যাত্রী তুলছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এল্যাও মানুষ মুখোত মাস্ক না পরি বাইরোত আইসোছে। ওমাক মুই যদি না তোলোং, অন্য কায়ও তুলবে। সে জন্য তুলছুং।’
জানতে চাইলে ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত দোকান খোলার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করার কথা বিক্রেতাদের। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।