ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতারা মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচারের জন্য হেফাজতের নেতাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন লিখিত ব্যক্তব্য পাঠন করেন। তিনি বলেন, ‘মিথ্যাচারের জন্য যদি হেফাজতের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষমা না চান, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের আইনে মামলা করা হবে।’ তিনি বলেন, হেফাজতের নেতারা ঘটনার শুরু থেকেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। হেফাজতের কেউ তাণ্ডবে জড়িত নন, তাঁদের এ বক্তব্যকে নিছক মিথ্যাচার ও অপরাজনীতি বলে মনে করে ছাত্রলীগ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘২৬ থেকে ২৮ মার্চের সব তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত হয়েছে। হেফাজতের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র আমাদের সবার কাছেই আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সয়লাব হয়ে আছে তাদের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। তাদের মিথ্যা বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মানুষকে মর্মাহত করেছে।’
জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ২৭ মার্চ বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর নির্ধারিত আলোচনা সভা ছিল। আলোচনা শেষে ২৬ মার্চে স্বাধীনতা দিবসের দিন হেফাজতের তাণ্ডবের প্রতিবাদে তাঁদের মিছিল বের হয়। জেলা শহরের টিএ রোড অতিক্রম করার সময় মিছিলের শেষভাগে হঠাৎ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। শহরের কালীবাড়ি মোড়ে যাওয়ার পর মিছিলের নেতৃত্বে থাকা স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সবাইকে দাঁড় করিয়ে শান্ত থেকে যাঁর যাঁর বাড়িতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
ফেরার সময় শহরের মাদ্রাসা রোড থেকে শহরের ঘোড়াপট্টি (টিএ রোড) ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ আক্রমণে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। সে সময় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার মাইক থেকে বারবার ‘হাইয়্যা আলাল জিহাদ’ বলে এলাকাবাসীকে দা-বঁটি নিয়ে বেরিয়ে আসতে বলা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীকে ‘কতল’ করার আহ্বান করা হয়। এরপর এলাকার বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে মিলে টিএ রোড ও কাজী মাহমুদ শাহ রোড ও থানা সড়কে যাঁকে পেয়েছেন, তাঁর ওপরই হামলা করেছেন।
২৭ মার্চ আমাদের দলের মিছিলের কেউ মাদ্রাসা কিংবা এর আশপাশেও যাননি। কান্দিপাড়ার ছাত্রদলের ক্যাডার নয়ন ও অনু ছাত্রলীগের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগের নেতা শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে জানতে পারেন, একই দিন বিকেল চারটায় সরাইল উপজেলার অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা-ভাঙচুর করা হয়। আর ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের দিন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বাড়িঘর, জেলার সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের তাণ্ডব চালানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২৭ মার্চ আমাদের দলের মিছিলের কেউ মাদ্রাসা কিংবা এর আশপাশেও যাননি। কান্দিপাড়ার ছাত্রদলের ক্যাডার নয়ন ও অনু ছাত্রলীগের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। তাঁরা (হেফাজত নেতারা) অপপ্রচার করছেন যে আমাদের মিছিল করার কারণেই নাকি তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়েছে। তাহলে প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনাদের মাধ্যমে যে ২৬ মার্চ শহরে তাণ্ডব চালানো হলো, সেটি কার উসকানিকতে হয়েছিল? আমাদের মিছিলের আগে থেকে শহরে বাইরে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে নন্দনপুর বাজারে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে হেফাজতের সংঘর্ষ হয়। একই সঙ্গে সরাইলের অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হলো কী কারণে?’
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন হেফাজতের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। পাশাপাশি ন্যক্কারজনক ওই ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করে তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় একজন, ২৭ মার্চ টিএ রোড এলাকায় পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন, একই দিন শহরের বাইরে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুর বাজারে পাঁচজন ও সুহিলপুরে দুইজন এবং ২৮ মার্চ মার্চে শহরের বাইরে বিশ্বরোড মোড়ে দুইজন, শহরতলীর পৈরতলা এলাকায় একজন ও পীরবাড়ি এলাকায় একজন নিহত হয়েছেন। এসব কেন হলো। এর উত্তর হেফাজতের নেতাদের দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তামাচ্ছুম অনিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের মাহমুদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শনে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডবের সঙ্গে হেফাজতের কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সাজিদুর রহমান ও জেলার সাধারণ সম্পাদক মুফতি মো. মোবারকুল্লাহ।