অবকাঠামো বলতে কেবল একটি টিনের ছাউনির ভবন। সেই ভবনের একটি কক্ষে ছয়টি শয্যা। রোগীর চাপ বেশি হলে সেবা নিতে হয় মেঝেতে থেকেই। অস্ত্রোপচারের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রসূতিকে নিবিড় পরিচর্যা কক্ষে রাখার ব্যবস্থাও নেই। দুজন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত একজন। এমন অনেক না থাকার মধ্যেও এবারও বিভাগে সেরা হয়েছে সুনামগঞ্জ মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র।
২০১৮ সালের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে ‘মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র’ বিভাগে জরুরি প্রসূতিসেবায় এই স্বীকৃতি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত সোমবার ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সুনামগঞ্জ মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের প্রধান জসিম উদ্দিন খানের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। ২০০৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে সেরা হয় এই প্রতিষ্ঠান। আরও ছয়বার বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছে। জরুরি প্রসূতিসেবা, মা ও শিশুর সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে এসব পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতিসেবার পাশাপাশি মা ও পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের প্রয়োজনীয় সেবা, টিকাদান, নারী ও পুরুষদের বন্ধ্যাকরণের সেবা, নারীদের জরায়ু ও স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণের পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। ২০১৮ সালে এখানে ৪ হাজার ৩১৬ জন নারী বিভিন্নভাবে সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রসূতি পরিচর্যা পেয়েছেন ২ হাজার ৩৮১ জন, স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেছেন ৪৬৪ জন, সন্তান জন্মদানে অস্ত্রোপচার (সিজার) হয়েছে ৫০ জনের, অন্যান্য অস্ত্রোপচার হয়েছে ৬০ জনের, সন্তান প্রসবোত্তর সেবা পেয়েছেন ১ হাজার ৩৬১ জন।
একই বছর ১ হাজার ৫৫৩টি শিশুকে সেবা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ রোগী সেবা নিয়েছেন ৩ হাজার ৪০২ জন। ক্যানসার শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৫৬ জন নারীর।
১৯৫১ সালে শহরের কয়েকজন নারী সমাজকর্মীর উদ্যোগে প্রথমে একটি টিনের ছাউনির ভবনে শুধু প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদানের জন্য এই কেন্দ্র চালু হয়। একপর্যায়ে এটি পৌরসভার মাধ্যমে পরিচালিত হয় আরও কয়েক বছর। পরে এটি সরকারীকরণ হয়। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সেই টিনের ছাউনির একটি ঘরেই সেবা কার্যক্রম চলছে। জেলা শহর ও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের পরিবারের গর্ভবতী মা এবং শিশুরাই এখানে সেবা নিতে আসেন বেশি। ওই ভবনের একটি কক্ষে ছয়টি শয্যা রয়েছে। অনেক সময় রোগী বেশি হলে মেঝেতে থেকেই সেবা নিতে হচ্ছে অনেকের।
এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রসূতি মাকে নিবিড় পরিচর্যাকক্ষে রাখার কথা। কিন্তু এখানে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেই। দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে শুধু চিকিৎসা কর্মকর্তা (ক্লিনিক) জসিম উদ্দিন খান কর্মরত। অন্যজন অবেদনবিদ। দুই বছর ধরে তিনি প্রশিক্ষণে আছেন। ফলে শহর এবং শহরের বাইরের সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুরোধের মাধ্যমে অবেদনবিদ নিয়ে এসে প্রসূতি মায়েদের অস্ত্রোপচার করাতে হয়।
টিআইবির সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি কানিজ সুলতানা বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে প্রসূতি মায়েদের অস্ত্রোপচারে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এই ব্যয় বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে মানুষের ভিড় থাকে বেশি। এটিকে আরও আধুনিকীকরণ ও শয্যা বাড়ানো উচিত। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক যেন সব সময় থাকে, এটি নিশ্চিত করতে হবে।
চিকিৎসা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন খান বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকলেও আমরা মা ও শিশুদের প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে সাফল্যের স্বীকৃতি পাচ্ছে।’ প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ শয্যায় উন্নীত করাসহ একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ছয় বছর ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন ভবন হলে শয্যার সংখ্যা বাড়বে, আরও চিকিৎসক নিয়োগ হবে। তখন মানুষ আরও বেশি সেবা পাবে।