কল্পনা আক্তারের (৩০) আক্ষেপ কিছুতেই কাটছে না। তাঁর চোখের সামনেই তাঁর মা সুফিয়া খাতুনকে (৫০) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জমিসংক্রান্ত সামান্য বিরোধের জের ধরে গত বুধবার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নে প্রতিবেশীদের হাতে খুন হন সুফিয়া।
বৃহস্পতিবার সকালে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকার্ত স্বজনেরা সুফিয়ার লাশের অপেক্ষায়। বিলাপ করছেন বড় মেয়ে কল্পনা। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার চোখের সামনেই আমার মাকে ওরা পিটিয়ে মেরেছে। মায়ের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়েছে। আমার মায়ের রক্তে পাকা রাস্তাটা লাল হয়ে গেছে।’
বুধবার সুফিয়া হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর স্বামী কামরুজ্জামান প্রতিবেশী তইবুল আলমসহ (৬৫) ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।
পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক বছর ধরে বাড়ির পাশের মাত্র চার শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল প্রতিবেশীদের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়। গত বুধবার সকালে সেই জমিতে চাষাবাদের জন্য জৈব সার দিচ্ছিলেন সুফিয়া খাতুন (৫০)। এ সময় তইবুল আলমের পরিবারের লোকজন তাঁকে বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এতে সুফিয়া খাতুন ও তাঁর মেয়ে কল্পনা আক্তার আহত হন। এ সময় আসাদুজ্জামান নামের এক প্রতিবেশী অটোভ্যানের চালক তাঁর ভ্যানে আহত মা-মেয়েকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তইবুল আলমের ছেলে লতিফ, হারুন ও ভাতিজা আফজালুর মোটরসাইকেলে এসে বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে চন্দনবাড়ি বাজার এলাকায় আহত মা-মেয়েকে ভ্যান থেকে নামিয়ে আবারও মারপিট করেন। এ সময় সুফিয়া খাতুন সড়কে পড়ে গেলে তাঁর ওপর মোটরসাইকেলের চাকা তুলে দেওয়া হয়।
বাধা দিলে ভ্যানচালক আসাদুজ্জমানকেও মারপিট করে আহত করেন তাঁরা।
সড়কে এমন ঘটনা দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আফজালুরকে (৪০) আটক করেন। সেখানে সুফিয়া খাতুনের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে বোদা থানার পুলিশ চন্দনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে আটক আফজালুরকে থানায় নিয়ে আসে। এ ছাড়া বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা আসামি তইবুল আলম (৬৫), তাঁর স্ত্রী লুৎফা বেগম (৫৩) এবং পুত্রবধূ নার্গিস আক্তারকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে নিহত সুফিয়া খাতুনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত তইবুল আলমের পরিবারটির অন্য সদস্যরা সবাই এখন পলাতক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল ইসলাম সরকার বলেন, নিহত সুফিয়া খাতুনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার নামীয় চারজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।