যে বয়সে মা–বাবার কোলই হওয়ার কথা ছিল সার্বক্ষণিক নিরাপদ আশ্রয়স্থল, সে বয়সেই করোনার কারণে নিঃসঙ্গতার কষ্ট বুঝে গেল শিশু রোশনী। প্রথমে বাবার আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিচ্ছিন্নতার কষ্টের শুরু। এরপর আক্রান্ত হন মা। কিছুদিন পর সে–ও।
তবে বাবা–মায়ের সঙ্গে ২১ দিনের বিচ্ছিন্নতার কষ্ট দূর হয়েছে ১ বছর ৩ মাস বয়সী শিশুটির। গত মঙ্গলবার বাবা–মায়ের কোলে ফিরেছে সে।
রোশনীর মা জেসমিন আক্তার কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। গত ২১ এপ্রিল তিনি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। ওই দিনই শিশুটি মায়ের কোল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর আগে ১৯ এপ্রিল একই হাসপাতালের একই পদে কর্মরত শিশুটির বাবা সেলিম মিয়াও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। দুজনের চিকিৎসা শুরু হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ইউনিটে।
মা–বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া রোশনীকে নিয়ে স্বজনদের শুরু হয় অন্য রকম লড়াই। একসময় শিশুটিও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এবার স্বজনদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয় রোশনী। দিনটি ছিল গত ১ মে। এর আগে মা আক্রান্ত হলে তাকে নিরাপদ রাখতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু সেও আক্রান্ত হলে গ্রামের বাড়ি থেকে এনে রাখা হয় ভৈরব শহরে নিজেদের বাসায়। একজন স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধানে সেখানেই চিকিৎসা চলে তার।
গত ৪ এপ্রিল রোশনীর বাবা–মা দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন। তারপরও আদরের সন্তানের কাছে ঘেঁষতে পারছিলেন না বাবা–মা। মা জেসমিন বলেন, ‘পেশার কারণে জীবনে অনেক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছি। তবে এত কঠিন বাস্তবতা সামনে আসবে ভাবিনি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এই হাসপাতালের ২২ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত। তবে শিশুটির আক্রান্ত হওয়ায় মনটা বেশি খারাপ হয়েছিল। সে সুস্থ হয়ে বাবা-মায়ের কোলে ফেরায় স্বস্তি পেয়েছি।’