প্রয়াত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী অরুণ বসুর শোকস্মরণ ও স্মৃতিতর্পণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেন। শনিবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
প্রয়াত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী অরুণ বসুর শোকস্মরণ ও স্মৃতিতর্পণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেন। শনিবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে

ফরিদপুরে স্মরণসভা

‘মানুষকে ভালো না বাসলে ভালোবাসা পাওয়া যায় না, এ অরুণ বসুর শিক্ষা’

ফরিদপুরে প্রয়াত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী অরুণ বসুর স্মরণে সভা হয়েছে। ফরিদপুর প্রেসক্লাব ও ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে আজ শনিবার বেলা ১১টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রচলিত অনুষ্ঠানের মতো এ অনুষ্ঠানে কোনো সভাপতি, প্রধান বা বিশেষ অতিথি কিংবা উপস্থাপক ছিলেন না। অরুণ বসুর ঘনিষ্ঠ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। করেন স্মৃতিচারণা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘স্বশিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন অরুণ বসু। মানুষকে ভালো না বাসলে যে ভালোবাসা পাওয়া যায় না, এ শিক্ষা আমরা অরুণ বসুর কাছ থেকে পেয়েছি।’

সভায় অরুণ বসুর স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ সামাদ, ফুলকির সভানেত্রী অঞ্জলি বালা, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আজম, অরুণ বসুর বন্ধু নাট্যব্যক্তিত্ব বিপ্লব বালা, অরুণ বসুর সহধর্মিণী কবিতা গোস্বামী, অরুণ বসুর ভাতিজা শংকর মজুমদার, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, ফরিদপুরের সংস্কৃতিকর্মী আহমেদ জালাল, বলাই দাস, সৈয়দ জুনায়েদ পারভেজ, আসমা আক্তার, আবুল বাতিন, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চক্রবর্তী প্রমুখ।

অরুণ আমাকে বলতেন সব ভুলে যেতে। এ জগতে যে যত ভুলতে পারে, সে তত বাঁচতে পারে। কিন্তু আমি কেন তাঁর স্মৃতি ভুলতে পারছি না, এক মুহূর্তের জন্যও না। তিনি বাইরের মানুষ নিয়ে থাকতেন। বাহির ছিল তাঁর ঘর। এ রকম একজন বাইরের লোককে ঘরে নিয়ে আসা বড় কঠিন।
কবিতা গোস্বামী, অরুণ বসুর স্ত্রী

ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বলেন, অরুণ বসুর মতো জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির সংখ্যা আমাদের সমাজে কমে যাচ্ছে। অরুণ বসু প্রকৃত দেশপ্রেমিক ছিলেন। এ জন্যই তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন অরুণ বসু। তিনি নিজের কথা ভাবতেন না, সমাজ ও দেশের কথা ভাবতেন। এ জন্য ঘরের খোঁজ তিনি রাখতেন না। তিনি যা করেছেন সমাজের জন্য করে গেছেন।

ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সাধারণ সম্পাদক এমএ সামাদ বলেন, ‘অরুণ বসুকে আমাদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য তাঁর ওপর একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা জরুরি। কোনো সংগঠনে সবাই কাজ করেন না, কেউ কেউ করেন, অরুণ বসু তাঁদেরই একজন।’

ফুলকির সভাপতি অঞ্জলি বালা বলেন, মানুষকে ভালো না বাসলে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। অরুণ বসু মানুষকে ভালোবাসতেন বলেই তিনি মানুষের এত ভালোবাসা পেয়েছেন।

অরুণ বসুর স্ত্রী কবিতা গোস্বামী বলেন, ‘অরুণ আমাকে বলতেন সব ভুলে যেতে। এ জগতে যে যত ভুলতে পারে, সে তত বাঁচতে পারে। কিন্তু আমি কেন তাঁর স্মৃতি ভুলতে পারছি না, এক মুহূর্তের জন্যও না। তিনি বাইরের মানুষ নিয়ে থাকতেন। বাহির ছিল তাঁর ঘর। এ রকম একজন বাইরের লোককে ঘরে নিয়ে আসা বড় কঠিন।’

অনুষ্ঠানে ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি সারথি অরুণ বসু’ শীর্ষক নিজের লেখা প্রবন্ধ পাঠ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব বিপ্লব বালা। এরপর অরুণ বসুর আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অরুণ বসুর প্রিয় শিল্পী ছিলেন সমাপ্তি রায়। জন্মান্ধ এই শিল্পী অরুণ বসুর স্মরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আমাদের প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’ এবং শেষে ‘এমন মানব জনম আর কি হবে’ গান পরিবেশন করেন। সাংবাদিক ও প্রথমা প্রকাশনার সমন্বয়ক অরুণ বসু (৬৮) গত ৭ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।