মাদারীপুরের ডাসারে কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়ায় অভিযান চালিয়ে টিনশেড ঘরে (সুনীল স্মৃতি পাঠাগার) বিএনপি নেতার তালা ভেঙে ফেলা হয়। পরে সেখানে নতুন তালা লাগানো হয়।
এর আগে গত শনিবার কালকিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সোহেল হাওলাদার ওই ভিটা নিজের পারিবারিক জমি দাবি করে দখলে নেন। তিনি ঘরের একাধিক ছবি, লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও আসবাব ভাঙচুর করেন এবং সেখানে ওএমএসের চাল মজুত করে ঘরটি তালাবদ্ধ করে রাখেন। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘মাদারীপুরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা বিএনপি নেতার দখলে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আজ দুপুর ১২টার দিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটায় পুলিশ ও সেনাসদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যান কালকিনির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবা ইসলাম, ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও উত্তম কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে পৈতৃক ভিটা ও জমি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন। লেখকের ঘরে নতুন তালা লাগানো হয়েছে। এই জমিতে অনুমতি ছাড়া কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। অতি শিগগিরই লেখকের পৈতৃক ভিটায় সুনীল স্মৃতি মিউজিয়াম, সুনীলের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন, পুকুরপাড়–সংলগ্ন উন্মুক্ত মঞ্চ, শান বাঁধানো ঘাট নির্মাণ করে হবে। লেখকের পৈতৃক ভিটা একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।’
উত্তম কুমার দাশ আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত ওই নেতার বিরুদ্ধে এখনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লেখকের পৈতৃক ভিটায় বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি করবে ডাসার থানা-পুলিশ। জানতে চাইলে ওসি এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে দখলদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে, সেই বিষয়ে পুলিশ ওই বাড়ি নজরদারি করবে।’
উল্লেখ্য, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। সেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৭ একর ১৫ শতাংশ পৈতৃক জমি রয়েছে। এর মধ্যে ২ একর ৯৭ শতাংশ খাসজমি হিসেবে রেকর্ড আছে। সুনীল গঙ্গোপ্যাধ্যায় ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান।