রাজশাহী নগরের মাদকের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশিয়াডাঙ্গা থানার গুড়িপাড়া মহল্লা। এই এলাকার অনেকেই এখন গুড়িপাড়ার পরিচয় দিতে বিব্রত হন শুধু মাদকের কারণে। এই দুর্নাম থেকে মুক্তি পেতে এলাকাকে মাদকমুক্ত করার পাশাপাশি নামও পরিবর্তন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সুধীজনেরা। পুলিশও এলাকাকে মাদকমুক্ত করার পর মহল্লার নাম বদলের আশ্বাস দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার এ এলাকায় বিট পুলিশিং কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কাশিয়াডাঙ্গা জোনের উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেছেন, মাদকমুক্ত করার পরে গুড়িপাড়ার নামও পরিবর্তন করা হবে। গুড়িপাড়া নামে কোনো মহল্লা থাকবে না। এই মহল্লায় যাঁরা বাস করবেন, তাঁরা কেউ মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন না।
বিট পুলিশিং কার্যক্রম হচ্ছে একটি থানাকে কয়েকটি ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করা। একেকটি ভাগকে একটি বিট বলা হবে। এখানে একজন উপপরিদর্শক, দুইজন সহকারী উপরিদর্শক ও দুইজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন। বিট কার্যালয়ে থানার প্রায় সব তথ্যই থাকবে। বিটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য উপপরিদর্শক দায়ী থাকবেন। সবকিছু তাঁর নখদর্পনে থাকবে। এভাবে কাশিয়াডাঙ্গা থানাকে পাঁচটি বিটে ভাগ করা হয়েছে। ২০ আগস্টের মধ্যে সব কটি বিটের উদ্বোধন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিট পুলিশিং কার্যালয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে গুড়িপাড়া মহল্লায় গোলজারবাগ ঈদগাহ মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘আমি এলাকায় নতুন। আসার পর শুনছি, এখানে শুধু মাদকের ব্যবসা। তবে সব পরিবার নয়, ৪০০ পরিবার থাকলে ৪০টি পরিবার মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর ফলে এলাকার বদনাম হয়ে গেছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরেফিন জুয়েল বলেন, মহল্লার মানুষ এখন গুড়িপাড়া নাম পরিবর্তন করতে চাইছেন। কিন্তু শুধু মহল্লার নাম পরিবর্তন করলে হবে না, নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। নিজেদের সমাজটাকে পরিবর্তন করতে হবে। পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। সবার সহযোগিতায় এলাকাটিকে মাদকমুক্ত করতে চাই। সেটি সম্ভব হলেই গুড়িপাড়ার নাম পরিবর্তন করা হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার। গুড়িপাড়া মহল্লার এই বাসিন্দা সভায় বলেন, ‘গুড়িপাড়ার নাম বললে মানুষ আমাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকায়। এটা আমাদের জন্য লজ্জার, অপমানের। এ অপমান আর সহ্য হয় না। তাই আমরা এলাকাকে মাদকমুক্ত করার জন্য পুলিশকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। তবে পুলিশ যেন কোনো ভালো মানুষকে হয়রানি না করে।’
অনুষ্ঠানে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ, কেশবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিট পুলিশ কার্যালয়ের উদ্বোধন শেষে উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল মহল্লায় মাদকবিরোধী প্রচারপত্র বিলি করেন। প্রচারপত্রে লেখা ছিল, ‘জীবন একটাই, তাকে ভালোবাসুন। মাদক থেকে দূরে থাকুন।’
সভা শেষে যোগাযোগ করা হলে কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, মহল্লার ভেতরের একটি জায়গার নাম গোলজারবাগ। স্থানীয় ব্যক্তিরা সেই নামানুসারে এলাকার নামকরণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।