রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে হলছাড়া করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থীর বরাদ্দ পাওয়া সিটে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে তোলা হয়েছে। ফেলে দেওয়া হয়েছে আবাসিক শিক্ষার্থীর আসবাব। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম জাবের হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
জাবের প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, তাঁর বাবা ঢাকার কারওয়ান বাজারে দিনমজুর হিসেবে সবজি ওঠানো-নামানোর কাজ করেন। তাঁদের বাড়ি নোয়াখালীতে। বাবার আয়ে সংসার চলে। টানাপড়েনের সংসারে তিনি রাজশাহীতে টিউশনি করে চলেন। গত সাত-আট মাস আগে তিনি হলে সিটের জন্য আবেদন করেন। তখনই তাঁর আবাসিক কার্ড হয়ে যায়। গত ২০ এপ্রিল হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে হলের ৪২৬ নম্বর কক্ষে ওঠেন জাবের। ঈদের ছুটি শেষে গত ৮ মে আবার হলে এসে থাকতে শুরু করেন। কোনো সমস্যা হচ্ছিল না তাঁর।
ছাত্রলীগের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার বিষয়ে জাবের বলেন, গত রোববার রাতে তিনি হলের কক্ষেই ছিলেন। ছাত্রলীগ পরিচয়ে কয়েকজন এসে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী তাঁর সিটে তুলে দেন। ওই শিক্ষার্থীর নাম শিহাবউদ্দিন। ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের ওই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কর্মী, হল ছাত্রলীগের সভাপতি মোমিনুল ইসলামের এলাকার ছোট ভাই।
মোমিনুল ইসলামের পরিচয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা জাবেরকে জানান, এটি পলিটিক্যাল বেড। তখন জাবের বলেন, এই কক্ষে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে উঠেছেন। তাঁর আবাসিক কার্ড আছে। তখন ছাত্রলীগের কর্মীরা জানান, তাঁরা এসব কথা শুনবেন না। ওই বেডে নতুন একজন উঠবে। এরপর জাবের বলেন, ‘আমি এখন এই রাতে কোথায় যাব? এই কথা শুনে ছাত্রলীগের একজন বলেন, “আপনি হুজুর মানুষ। আজকে থেকে কাল ভোরে চলে যাবেন’।’ পরে জাবের রাতেই হল ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে যান। সভাপতি খারাপ আচরণের আগেই জাবেরকে ওই কক্ষ বের হয়ে যেতে বলেন।
পরদিন সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলের ৪২৬ নম্বর কক্ষে আবার আসেন ছাত্রলীগের সাত-আটজন সদস্য। এ সময় ঘুমিয়েছিলেন জাবের। তিনি বলেন, ‘তাঁরা এসে বলে, “তুমি নামো। এই সিটে এই ছেলে (শিহাবউদ্দিন) থাকবে। এই সিটে তোমার থাকার কোনো অধিকার নাই”। এসব কথা বলে তাঁরা মশারি খুলে ফেলে। বেডিংপত্রসহ সবকিছু ফেলে দেয়। পরে ছাত্রলীগের ওঠানো ছাত্রের মশারি টানিয়ে দিয়ে চলে যায়।’ পরে রুমমেটরা নতুন ওঠা ছাত্রকে অনুরোধ করলে কোনো রকম রাত কাটাতে পারেন জাবের।
এ ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান জাবের। প্রাধ্যক্ষ তাঁকে হলের ওই কক্ষেই থাকতে বলেছেন। এখন তিনি ওই কক্ষেই অবস্থান করছেন। তবে ভয় কাটছে না তাঁর। এ ব্যাপারে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই সিটটা তাঁদের ছিল, কিন্তু হল প্রাধ্যক্ষ ওই ছেলেকে (জাবের) তুলে দিয়েছিলেন। বিষয়টা নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। এখন এটা সমাধান হয়ে গেছে। জাবেরই ওই কক্ষের শিক্ষার্থী। ও–ই থাকবে সেখানে। একটা ভুল হয়ে গেছে। মানুষমাত্রই তো ভুল হতে পারে। জাবেরকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো কথা বলেননি মোমিনুল।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ওই ছাত্র তাঁকে জানিয়েছেন। এরপর তিনি হলে গিয়েছিলেন। জাবের তাঁর কক্ষেই আছেন। আর কেউ তাঁর বরাদ্দ করা কক্ষে থাকবে না। কেউ আর ঝামেলা করতে পারবে না। বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।