মাগুরায় ২০ বছর পর ছাত্রদলের ‘একতরফা’ কমিটি

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল লোগো
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল লোগো

প্রায় দুই দশক পর মাগুরা জেলা ছাত্রদলের ১৯টি ইউনিটে আংশিক কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর আবার তা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ও কয়েকটি ইউনিটের আহ্বায়ক, সদস্য সচিবের স্বাক্ষরে ওই কমিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ওই কমিটিকে একতরফা দাবি করে শনিবার রাতেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকসহ একটি পক্ষ। আজ রোববার দুপুরে আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই কমিটিগুলো স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

গতকাল মহম্মদপুর উপজেলার ছয় ইউনিয়ন, শালিখার সাত ইউনিয়ন, দক্ষিণ মাগুরার দুই ইউনিয়ন ও মাগুরা পৌরসভার চারটি ওয়ার্ডের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার ইউনিয়নগুলোর ঘোষিত কমিটিতে জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. বায়োজিদ ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। আর পৌরসভার চার ওয়ার্ড ও দক্ষিণ মাগুরার দুই ইউনিয়নের কমিটিতে ওই দুই ইউনিটের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষর রয়েছে।

জেলা ছাত্রদলের নেতারা জানান, এসব ইউনিটে সর্বশেষ ২০০২ ও ২০০৩ সালের দিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল। সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করতে ছয় মাস আগে পুরোনো সব কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার অংশ হিসেবে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করে ছাত্রদল। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক নেতার সমন্বয়ে উপজেলা ও জেলার নেতাদের নিয়ে এসব কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শনিবার বিকেলে কমিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর রাতেই সেটিকে একতরফা দাবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু তাহের সবুজ, শালিখা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. তিতাস বিশ্বাস ও মহম্মদপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. রজব আলী। বিজ্ঞপ্তিতে সদ্য ঘোষিত কমিটিকে ‘বিতর্কিত ও একতরফা’ দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু তাহের রোববার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো ইউনিটের কমিটি করতে হলে জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি। এখানে সভাপতি নিজের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি দিয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। সংগঠনের স্বার্থেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রতিনিধির ওপর বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দপ্তর সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি দিয়েছেন। একটি পক্ষ সব সময় চায়, কমিটি না হোক। কমিটি হয়ে গেলে তো তাঁদের রাজনীতি থাকে না।’

পুরো বিষয়টির জন্য জেলা ছাত্রদলের নেতাদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল যুবায়ের। মাগুরা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত কমিটি আমার উপস্থিতিতে ঘোষণা করা হয়নি। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে যে কমিটি করা হয়েছিল, সেটার আকার আরও ছোট ছিল। প্রথমে প্রতি ইউনিটের কমিটি ছিল পাঁচ থেকে সাতজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কথা ছিল সেভাবে ঘোষণা করার। কিন্তু কমিটির আকার বাড়িয়ে প্রকাশ করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।’ তবে শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

এই নেতার সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আজ দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলার সব ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাকে না জানিয়ে কোনো কমিটি প্রকাশ করা যাবে না।’