মাগুরায় ইউপি নির্বাচন

সম্ভাব্য দুই সদস্যপদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, নিহত ৪

সবুর মোল্লার মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী মেরিনা বেগমের আহাজারি। শুক্রবার বিকেলে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ফটকে
ছবি: প্রথম আলো

মাগুরায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সম্ভাব্য দুই সদস্যপদপ্রার্থীর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে দুই ভাইসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে সদর উপজেলার জগদল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিবদমান দুই পক্ষই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন জগদল গ্রামের সবুর মোল্লা (৫২), কবির মোল্লা (৫০), রহমান মোল্লা (৫৬) ও ইমরান হোসেন (২৫)। সবুর ও কবির আপন দুই ভাই। তাঁদের বাবার নাম শাহাবাজ উদ্দিন মোল্লা। আর রহমান মোল্লা হলেন সবুরের চাচাতো ভাই। নিহত ইমরানের বাবার নাম লুৎফর।

পুলিশ, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জগদল ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ইসলাম ও একই এলাকার মাতবর সবুর মোল্লার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। আগামী ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে একই ওয়ার্ডে সৈয়দ হাসান নামের এক ব্যক্তি সদস্যপদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। সৈয়দ হাসানকে সমর্থন দেয় সবুর মোল্লার পক্ষ। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। গতকাল দুপুরের পর জগদল গ্রামের সৈয়দ রূপাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে সৈয়দ হাসানের সমর্থক সবুর মোল্লা, কবির মোল্লা ও রহমান মোল্লা এবং নজরুল ইসলামের সমর্থক ইমরান হোসেন নিহত হন।

পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. রফিকুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত চারজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

নিহত সবুর মোল্লার স্ত্রী মেরিনা বেগমের অভিযোগ, প্রতিপক্ষ নজরুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন প্রকাশ্যে তাঁর স্বামীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। সৈয়দ হাসানের মুঠোফোনেও একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে জগদল ইউপির চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে আধিপত্য নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সেটা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার ও দলাদলিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। রাজনীতি বা নির্বাচনের সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এলাকায় পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলছে।’