মাকে পেয়েছে ছোট্ট সুজন, সৎবাবা চেয়েছিলেন বিক্রি করতে

চার দিন পর ছেলেকে পেয়ে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নেন মা চম্পা। রাউজান থানা, রাউজান, ১৮ নভেম্বর। ছবি: এস এম ইউসুফ উদ্দিন
চার দিন পর ছেলেকে পেয়ে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নেন মা চম্পা। রাউজান থানা, রাউজান, ১৮ নভেম্বর। ছবি: এস এম ইউসুফ উদ্দিন

সেই সুজন (৬) ফিরেছে মায়ের কোলে। আজ সোমবার বিকেলে মা চম্পা খাতুন (২৭) সুজনকে নিতে চট্টগ্রামের রাউজান থানায় আসেন।

সিলেটের হবিগঞ্জের মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা চম্পা। তিনি বলেন, ছেলেকে নতুন জামা কিনে দেবেন বলে সৎবাবা জজ মিয়া (৪৫) বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই তিনি লাপাত্তা। জজ মিয়ার মুঠোফোনও বন্ধ।

চম্পা বলেন, জজ মিয়া তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। জজ মিয়ার বাড়িও হবিগঞ্জে। সাত মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁরা চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার চর রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। দুজনের আগের পক্ষের ছেলেমেয়ে আছে। গত শুক্রবার জজ মিয়া সুজনকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরে আসেন।

কয়েক দিন ধরে সুজনকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা চম্পা। তিনি বলেন, সুজনের খোঁজে চট্টগ্রাম নগরে মাইকিং করা হয়েছে। ছেলেকে খুঁজতে হবিগঞ্জে স্বামীর বাড়িও গিয়েছিলেন তিনি। তবে থানায় নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হয়, সেটা তিনি জানতেন না।

ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মা। তাই কাছে পেয়েই কেঁদে ফেলেন তিনি। রাউজান থানা, রাউজান, ১৮ নভেম্বর। ছবি: এস এম ইউসুফ উদ্দিন

ছেলেকে হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখেন। এভাবে তিন দিন কেটে যায় চম্পার। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে, সুজন আছে রাউজান থানায়। সন্ধান পেয়েই আজ হবিগঞ্জ থেকে চম্পা রাউজানে ছুটে আসেন। ছেলে খুঁজে পায় মাকে, মা পেয়েছেন ছেলেকে। পরম মমতায় মা বুকে জড়িয়ে নেন নাড়িছেঁড়া ধনকে। মাকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে সুজন। কেঁদে ফেলেন মা-ও।

চম্পা বলেন, জজ মিয়া কয়েক দিন আগে সুজনকে বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি স্বামীর ওপর খুব খেপেছিলেন। পরে শুক্রবার কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে সুজনকে নিয়ে জজ মিয়া বের হয়েছিলেন। এখন তিনি বুঝতে পারছেন, জজ মিয়া সুজনকে বিক্রি করার উদ্দেশ্যেই শহরে নিয়ে এসেছিলেন।

সুজনকে নিয়ে মা চম্পা এখন নিজের গ্রামে ফিরে যেতে চান। রাউজান থানা, রাউজান, ১৮ নভেম্বর। ছবি: এস এম ইউসুফ উদ্দিন

চম্পা আরও বলেন, এ ঘটনার পর তিনি আর জজ মিয়ার সঙ্গে থাকবেন না। তাঁকে তালাক দেবেন। আর সুজনকে নিয়ে চলে যাবেন গ্রামের বাড়ি।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেপায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সৎবাবা শিশুটিকে হয়তো বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন। তবে সুবিধা করতে না পেরে হয়তো সুজনকে রেস্তোরাঁয় রেখে যান। সুজন চার দিন নারী পুলিশ সদস্যদের আবাস ভবনে খুব যত্নে ছিল। সুজনের মা থানায় এলে প্রথমে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। পরে সুজনকে তাঁর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে কোনো অভিযোগ না করায় জজ মিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান ওসি।

আরও পড়ুন:
মায়ের কোলে ফিরতে পারবে তো সুজন