মাকে নিয়ে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচলেন ইসমাইল, খুঁজে বেড়াচ্ছেন লঞ্চে থাকা স্ত্রী–মেয়েকে

লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ রাজিয়া সুলতানা ও তাঁর মেয়ে নুসরাত
ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সময় বৃদ্ধ মাসহ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন ইসমাইল আকন (৪৮)। কিন্তু একই সময় স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা (৩৫) ও ৯ বছর বয়সী মেয়ে নুসরাতকে হারিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়। প্রিয়জনদের ফিরে পেতে সুগন্ধা নদীর তীরবর্তী পৌর মিনি পার্কে রাতভর অবস্থান করেছেন তিনি।

ইসমাইল আকনের বাড়ি বরগুনার এম বালিয়াতলি এলাকায়। ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজ তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে। অপর দিকে তাঁর বৃদ্ধ মাসহ আরেক কন্যা বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইসমাইল আকন বলেন, দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ঢাকা থেকে অভিযান-১০ লঞ্চের নিচতলার ডেকে চেপে বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত তিনটার দিকে যখন লঞ্চের সবখানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তখন সবাইকে নিয়ে দোতলায় চলে যান। এর মধ্যেই হুড়োহুড়ির একপর্যায়ে স্ত্রী ও মেয়েদের হারিয়ে ফেলেন। আগুনের লেলিহান শিখার মধ্যেও আধা ঘণ্টার মতো স্ত্রী–সন্তানকে খুঁজেছেন। পরে লঞ্চের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় টিকতে না পেরে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন ইসমাইল।

প্রচণ্ড কুয়াশা ও শীতের মধ্যে মাকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন ইসমাইল। পরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে গিয়ে বড় মেয়ে লামিয়াকে (১৩) দগ্ধ অবস্থায় খুঁজে পান। তাঁর মাও অগ্নিদগ্ধ হওয়ায় তাঁকে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইসমাইল বলেন, ‘আমার স্ত্রী–সন্তানকে ফেলে রেখে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার কষ্ট আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। মর্গে খুঁজেও ওদের লাশ পাইনি। আমি কী সান্ত্বনা নিয়ে বাঁচব?’

এদিকে স্ত্রী–সন্তানকে দেখতে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অভিযান–১০ লঞ্চের আরেক যাত্রী আবদুল হক (৩০)। তাঁর বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়।

বরগুনা যাওয়ার পথে এই ছবি তুলে স্ত্রী–সন্তানদের পাঠিয়েছিলেন আবদুল হক

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল হক বিয়ে করেন বরগুনার ছৈলাবুনিয়া গ্রামের প্রিয়া আক্তারকে (২৬)। ঢাকা থেকে আগেই স্ত্রী প্রিয়া আক্তার তাঁর দুই মেয়ে সাদিয়া ও হালিমাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। ঢাকার একটি কনফেশনারি দোকানে কাজ করা আবদুল হক ছুটি নিয়ে স্ত্রী–সন্তানদের দেখতে অভিযান-১০ লঞ্চে করে বরগুনা যাচ্ছিলেন।

আবদুল হকের খোঁজে গতকাল শুক্রবার থেকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পাড় চষে বেড়াচ্ছেন প্রিয়ার বড় ভাই মো. খোকন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের স্বামীকে খুঁজে না পেলে বোন-ভাগনিদের কাছে কী জবাব দেব? আবদুল হক আসার পথে ছবি তুলে স্ত্রী–সন্তানদের কাছে পাঠিয়েছিল। সেই ছবি আজ স্মৃতি।’