কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘মহারাজ’। ফুটফুটে চেহারার ছেলে নবজাতককে দত্তক হিসেবে পেতে আগ্রহীর শেষ নেই। রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়-মাধ্যমিক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ অনেকেই আবেদন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর। কেউ আবেদন করেছেন সরাসরি। আবার কেউ আবেদন করেছেন অনলাইনে। শিশুটিকে পেতে চলছে তদবির আর সুপারিশ।
সাতক্ষীরা কালীগঞ্জে সড়কের পাশ থেকে গতকাল রোববার বিকেলে উদ্ধার হয় নবজাতকটি। তাকে রাখা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী কর্মচারীর তত্ত্বাবধানে। তিনি শিশুটিকে মাতৃস্নেহ দিচ্ছেন। পাশাপাশি সব সময় দেখাশোনা করছেন চিকিৎসক ও নার্স।
উদ্ধারকারী ইসরাইল বিশ্বাস, পঞ্চানন মণ্ডল ও আবদুস সাত্তার আজ সোমবার প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে মৎস্যঘেরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে উপজেলা তারালী ইউনিয়নের গোলখালি মহাশ্মশান এলাকায় আবর্জনাময় স্থান থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পান। কাছে গিয়ে দেখতে পান, একটি থলের ভেতর থেকে কান্নার শব্দ আসছে এবং ভেতরে কিছু একটা নড়াচড়া করছে। এ সময় ওই থলে তুলে দেখেন একটি ছেলে নবজাতক। তাকে পিঁপড়া কামড়াচ্ছে দেখে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
নবজাতকটি রাজপুত্রের মতো দেখতে। এ জন্য নাম দিয়েছি ‘মহারাজ’। অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন মহারাজকে দেখতে।মর্জিনা খাতুন, শিশুটিকে দেখভালকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিশুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে নবজাতকটি দত্তক নিতে আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, চাকরিজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ ২০ জন আবেদন করেছেন। এ ছাড়া অনেকেই মুঠোফোনে নবজাতকটিকে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন নবজাতকটির।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ তৈয়েবুর রহমান জানান, শিশুটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন–চার ঘণ্টা আগে ওই নবজাতকের জন্ম হয়েছে বলে তিনি জানান। শিশুটিকে হাসপাতালের নার্সদের কক্ষের পাশে একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তাকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা ও মাতৃস্নেহ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী মর্জিনা খাতুন।
মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘নবজাতকটি রাজপুত্রের মতো দেখতে। এ জন্য নাম দিয়েছি “মহারাজ”। অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন শিশুটিকে দেখতে।’
কালীগঞ্জের ইউএনও মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, শিশুটিকে দত্তক নিতে ইতিমধ্যে অনেকেই আবেদন করেছেন। শিশুটির স্বার্থ বিবেচনায় শিক্ষক কিংবা সরকারি চাকরিজীবী হলে তাঁদের আবেদন অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।