মসজিদের জেনারেটর দিয়ে তোলা পানিই ভরসা সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের

মসজিদের জেনারেটর দিয়ে তোলা খাওয়ার পানি নিতে মানুষের সারি। আজ সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের মোহাম্মদপুর এলাকায়
ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জ শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এখনো হাঁটুপানি। এর মধ্যেই নারী, পুরুষ ও শিশুদের দীর্ঘ লাইন। সবার হাতে কলসি, বালতি, বোতল। তাঁরা এসেছেন খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য। কয়েকজন যুবক পানির মধ্যেই সারিতে থাকা লোকজনকে পানি দিচ্ছেন। পার্শ্ববর্তী আলীপাড়া, বলাকাপাড়া ও বনানীপাড়া এলাকা থেকেও পানি নিতে এসেছেন লোকজন।

আজ সোমবার দুপুরে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। শুধু মোহাম্মদপুর নয়, পৌর এলাকার বলাকাপাড়া, আরপিননগর, তেঘরিয়া, ষোলঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে।

সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমছে। তবে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকট আছে সর্বত্র। বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত অনেকেই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে পান করেছেন। এখন বৃষ্টি কম। এতে সুপেয় পানির সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এখনো শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

খাবার পানি সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দারা। আজ সোমবার দুপুরে শহরের মোহাম্মদপুর এলাকায়

এখন পানি কমায় এবং পানিতে ময়লা থাকায় খাওয়ার পানি মিলছে না। এমন অবস্থায় শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মসজিদে মসজিদে জেনারেটরে পানি তুলে বিতরণ করা হচ্ছে। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং স্থানীয় তরুণ যুবকদের উদ্যোগে এটি করা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মুসলিম মিয়া (৪০) বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরিবার নিয়ে এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। এত দিন বৃষ্টির পানি খেয়েছেন। কিন্তু রোববার বিকেল থেকে বৃষ্টি কম। তাই খাওয়ার পানি মিলছে না।

আরেক বাসিন্দা সাজিদুর রহমান জানান, এখন পানি ঘোলা। ময়লায় ভরা। কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। এসব পানি খেলে পেটের অসুখ-বিসুখ হবে।

একই এলাকার মাহবুব আহমেদ বলেন, প্রথম দুদিন মানুষ নানাভাবে পানি সংগ্রহ করতে পেরেছে। এখন সংকট দেখা দেওয়ায় তাঁরা পানির ব্যবস্থা করেছেন। আসলে প্রথম দিকে পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল, মানুষ ঘর থেকে বের হতেই পারেনি। তাঁরা ইচ্ছা করলেও মানুষকে এই সহায়তা করতে পারেননি। এখন দুইবেলা পানি দেওয়া হচ্ছে। এলাকার যুবকেরাই জ্বালানির ব্যবস্থা করেছেন।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তেঘরিয়া এলাকা বাসিন্দা সৈয়দ তারিক হাসান জানান, তাঁদের এলাকায় একইভাবে র‌্যাবের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে মানুষকে খাওয়ার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মোহাম্মদ রাজু আহমেদ বলেন, শহরে এবারের ভয়াবহ বন্যায় এমন অনেক মানবিক কাজ চোখ পড়ছে। যুবক-তরুণেরা পাড়া-মহল্লায় নৌকা নিয়ে গিয়ে মানুষকে উদ্ধার করেছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। কষ্ট, দুর্ভোগের মধ্যে এসব মানবিক উদ্যোগ সমাজে আশা জাগায়।

সুনামগঞ্জে গত মাসের ১৩ তারিখে প্রথম দফায় বন্যা হয়। মানুষ এই বন্যার ধকল সইতে না সইতেই ১০ জুন থেকে আবার শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। একই সঙ্গে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জি থেকে নামে পাহাড়ি ঢল। ১৩ জুন থেকে আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো। ১৫ মে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা পুরোটাই প্লাবিত হয়। ১৬ জুন পানি প্রবেশ করে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে। দুপুর থেকে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে পুরো শহর প্লাবিত হয়ে যায়। রাতে মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে থাকে। রাত পোহানোর আগেই শহর ৫-৬ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এখন পানি কিছুটা কমেছে। শহর থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে।