পৌরসভায় ফগার মেশিন রয়েছে ছয়টি। চারটি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। অপর দুটিও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নষ্ট
মশার উপদ্রব বাড়ায় রাজবাড়ী পৌর এলাকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। শহরের নালা–নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার না করার পাশাপাশি মশকনিধন কার্যক্রমে গতি না থাকায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে মশকনিধন কার্যক্রম।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে মশকনিধনের জন্য চলতি অর্থবছরে কোনো বরাদ্দ আসেনি। গত বছর ২ কিস্তিতে ৯ লাখ ১ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে গত বছরের ২০ জানুয়ারি প্রথম কিস্তিতে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ১৯ এপ্রিল দ্বিতীয় কিস্তিতে ৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা পাওয়া যায়। পৌরসভায় ওষুধ ছিটানোর জন্য ফগার মেশিন রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে চারটি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অপর দুটি মেশিনও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নষ্ট। ফলে কয়েক দিন ধরে ওষুধ ছিটানো বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। পানিনিষ্কাশনের জন্য তৈরি নালাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে নালার পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হয় না, জমে থাকে। বিভিন্ন স্থানে ঢাকনা ভেঙে গেছে। ছোটখাটো ঝোপঝাড়গুলোতে ময়লা–আবর্জনা ফেলা হয়। এতে মশার বংশবিস্তারে সুবিধা হয়।
শহরের সজ্জনকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আইনজীবী অভিজিত কুমার বলেন, ঘরে-বাইরে সবখানে প্রচুর মশা। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে একটু কথাও বলার সুযোগ নেই। কয়েক মিনিটের মধ্যে মশা এসে ঘিরে ধরে। রাতে কোনোরকম ফাঁকফোকর পেলেই মশারির মধ্যে মশা ঢুকে যায়। পৌর এলাকার বাসিন্দারা খুব অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রতিটি এলাকায় স্প্রে করা প্রয়োজন। পানিনিষ্কাশনের নালাগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
সুমন বিশ্বাস শহরের নারাণবাবু পুকুর এলাকায় বহুতল ভবনের একটি মেসে থাকেন। তিনি বলেন, ‘সারা দিন ব্যস্ত থাকার পর মেসে গিয়ে একটু চেয়ারে বসতে পারি না। কারও সঙ্গে একটু মন খুলে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ নেই। ঘরে ঢুকেই সোজা মশারির ভেতরে ঢুকে যেতে হয়। মশার কামড়ে মাঝেমধ্যে খাওয়াদাওয়াও ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে।’
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা পর্যবেক্ষণকারী মো. মহিউদ্দিন বলেন, মেশিনগুলো সপ্তাহখানেক ব্যবহার না করলেই নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক দিন আগে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি মেশিন মেরামত করা হয়েছিল, কিন্তু ব্যবহার না করায় সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো কিছু ওষুধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন অফিস–আদালত থেকে চাহিদা পাওয়ার পর ওষুধ স্প্রে করা হয়। মশার উপদ্রব বেড়ে গেলে বিভিন্ন এলাকায় স্প্রে করা হয়।
পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ বলেন, সারা বছর মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো বরাদ্দ নেই। যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা নিয়মিত ব্যবহার করলে কয়েক দিনেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এ খাতে বরাদ্দ একেবারেই কম। ধারাবাহিকভাবে তিন মাস ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন। তাহলে আনাচকানাচে স্প্রে করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করছি। তবে পৌরবাসীকেও সচেতন থাকতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।’