খালের ওপর নেই কোনো সেতু। ছোট্ট যে সাঁকোটি আছে সেটিও বেশ নড়বড়ে। কী আর করা! বাধ্য হয়ে মরদেহ নিয়ে তাই চার স্বজন নেমে পড়লেন কোমর সমান পানিতে। খাটিয়ার নিচের অংশ তখন পানি ছুঁয়ে যাচ্ছিল । কোনোমতে তাঁরা স্রোত ঠেকিয়ে পার হলেন অন্য পাড়ে। সেই কষ্টের দৃশ্য ধরা পড়ে জানাজায় যোগ দিতে আসা কারও কারও মুঠোফোনের ক্যামেরায়।
ঘটনাটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুইছড়ি ইউনিয়নের। পূর্ব পুইছড়ির কাচারিপাহাড় এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম চৌধুরী গতকাল শুক্রবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। আজ শনিবার বাদ আসর পূর্ব পুইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রবীণ এই ব্যবসায়ীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাঁর বাড়ি আর জানাজার মাঠের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিতে কোনো সেতু না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বাবার লাশ এভাবে পার করার কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ছেলে সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মায়মুনর রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাবার মৃত্যুর পর কীভাবে তাঁর লাশ বাড়িতে নেবেন আর জানাজার মাঠে আনবেন, সেটি নিয়েই তাঁকে বেশি চিন্তা করতে হয়েছে। সকালে একইভাবে খাটিয়ার মাধ্যমে খাল পেরিয়ে লাশ বাড়িতে নেন। পরে বিকেলে জানাজা পড়াতেও একইভাবে আসতে হয় মাঠে। মায়মুনর রশিদ বলেন, 'বছরের পর বছর ধরে এভাবে আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে। সেতুর জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেও কাজ হয়নি।'
নাম প্রকাশ না করে এলাকার আরও কয়েকজন তরুণ বলেন, এই ছবির মাধ্যমে এলাকার মানুষদের দুঃখের গল্পটা হয়তো নতুন করে সামনে এসেছে। তবে বর্ষাকালজুড়েই এই পথ দিয়ে হাজারো মানুষকে যাতায়াত করতে হয় এভাবে ঝুঁকি নিয়ে। এই সময়ে পূর্ব পুইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
পুইছড়ির ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাইনে আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে একটা সেতু হওয়া জরুরি। এলাকাবাসীর দাবির সঙ্গে আমিও একমত। এ বিষয়ে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’