নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে ছুরিকাঘাতে রাকিব মিয়া (২১) নামের এক তরুণ খুন হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তরুণের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন নিহত রাকিবের বাবা ও চাচাতো বোন।
রাকিব উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। আহত দুজন হলেন রাকিবের বাবা সিরাজ উদ্দিন (৫০) ও চাচাতো বোন পাপ্পি আক্তার (২৬)। তাঁদের মধ্যে সিরাজ উদ্দিন রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পাপ্পি আক্তার মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাকিবের মা রেনুজা বেগম বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন একই এলাকার মৃত শাহজাহান মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২), তাঁর মা নাসিমা বেগম (৪০) ও খালা তাসলিমা বেগম (৩৮)। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদী রেনুজা বেগমের ছোট মেয়ে তামান্না আক্তার (৮) ও আসামি তাসলিমা বেগমের ছোট মেয়ে নাদিয়া আক্তার (৭) স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তারা একসঙ্গে মাদ্রাসায় যাতায়াত করত। গতকাল বিকেলে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে তারা একে অপরের গায়ে বিছুটিপাতা (গায়ে লাগালে চুলকানি হয়—এমন পাতা) লাগিয়ে দেয়। এতে দুজনেরই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এ ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে সাইফুল ইসলাম, তাঁর মা নাসিমা বেগম ও খালা তাসলিমা বেগম নাদিয়ার বাবা সিরাজ উদ্দিনের মুদিদোকানে আসেন। এ সময় তাঁরা সিরাজ উদ্দিনের সঙ্গে তীব্র কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বাগ্বিতণ্ডার কথা শুনে সিরাজ উদ্দিনের ছেলে রাকিব ও ভাইজি পাপ্পি বাড়ি থেকে ওই দোকানে যান। একপর্যায়ে সাইফুল সিরাজ উদ্দিনকে মারধর করতে উদ্ধত হলে রাকিব বাধা দেন। তখন সাইফুল সঙ্গে থাকা ছুরি বের করে রাকিবের পেটে আঘাত করেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে সিরাজ উদ্দিন ও পাপ্পির পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান সাইফুল।
রাকিবের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে দ্রুত মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাকিব ও তাঁর বাবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পথেই রাকিবের মৃত্যু হয়। আহত সিরাজ উদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে, পাপ্পি মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন জানান, তুচ্ছ ঘটনার জেরে ছুরিকাঘাতে রাকিব মিয়া খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সাইফুল ইসলাম, তাঁর মা নাসিমা বেগম ও খালা তাসলিমা বেগমকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।