কুমিল্লার কোটবাড়ীর ময়নামতি জাদুঘরের কাছেই শালবন বৌদ্ধবিহার। অষ্টম শতকে নির্মিত এই প্রত্নসম্পদের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে শত শত পর্যটক প্রতিদিন ভিড় করেন। শীতের এ মৌসুমে বেড়েছে দর্শনার্থী সমাগম। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জানায়, শালবন বিহার থেকে গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার ১২০ টাকা।
শালবন বিহার ছাড়াও কোটবাড়ী ও এর আশপাশের এলাকায় রয়েছে নানা প্রত্নসম্পদ। এসবের মধ্যে রূপবান মুড়া, কোটালিমুড়া, ইটাখলা মুড়া, আনন্দবিহার, ভোজবিহার, রানির বাংলো প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শালবন বৌদ্ধবিহারের আয়তন ৩৭ একর। অমূল্য প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ স্থানটি আগে শালবন রাজার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু সেখানে ১৯৫৫ সালে খননের পর ৫৫০ ফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত একটি বৌদ্ধবিহারের ভূমি নকশা উন্মোচিত হয়। এতে ১১৫টি ভিক্ষুকক্ষ রয়েছে। লালমাই পাহাড় এলাকায় বিহারটির আশপাশে একসময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল। তাই বিহারটির নাম দেওয়া হয় শালবন বিহার।
শালবন বিহারের মধ্যভাগে একটি মন্দির ও উত্তর বাহুর মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে নান্দনিক ও কারুকার্যময় প্রবেশ তোরণ। খননে প্রাপ্ত একটি পোড়ামাটির নিদর্শন থেকে জানা যায়, দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রী ভবদেব খ্রিষ্টীয় আট শতকে এ বিহার নির্মাণ করেন। তখন বিহারটির নাম ছিল ভবদেব মহাবিহার। এ বিহার থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ প্রত্নসম্পদ ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।
পুরো বৌদ্ধবিহারের মধ্যে রয়েছে হরেক রকমের ফুল—কসমস, ডালিয়া, জিনিয়া, মৌচান্দা, সেলভিয়া, বোতাম, গোলাপ, সিলভিয়া, কেলানডোলা ইত্যাদি। বছরজুড়ে ঋতুভিত্তিক নানা প্রজাতির ফুলের গাছও লাগানো হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রত্নসম্পদে ভরপুর কোটবাড়ী এলাকার শালবন বৌদ্ধবিহারের প্রথম খননকাজ ১৯৫৫ সালে শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত খনন করে শালবন বৌদ্ধবিহারের মূল মন্দিরকে ঘিরে চার পাশে ছোট ছোট নয়টি মন্দির ও ছয়টি স্তূপ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মূল মন্দিরের বাইরে আরও দুটি মন্দির ও চারটি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ নভেম্বর থেকে মূল বৌদ্ধবিহারের (মন্দিরের) উত্তর-পূর্ব কোণে পাঁচ বর্গমিটার আয়তনের ২১টি বর্গাকৃতি স্থানে খননকাজ শুরু করা হয়। গত ৩০ নভেম্বর সেখানকার একটি স্থানে ইট ও কাদামাটির তৈরি কূপের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন গোলাকার কূপটির ব্যাসার্ধ ১১ ফুট চার ইঞ্চি। ৩১ জানুয়ারি খননকাজ চলবে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লার কাস্টোডিয়ান আহমেদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শালবন বৌদ্ধবিহার দেখতে চলতি অর্থবছরের (২০১৪-২০১৫) জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ জন দেশি এবং ৬৭০ জন বিদেশি পর্যটক আসেন। এসব পর্যটকের কাছ থেকে টিকিট বিক্রি বাবদ ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪২০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশনা বিক্রি ও গাড়ি পার্কিং বাবদ আরও ৭৭ হাজার ৫২০ টাকা আয় হয়েছে। এতে দেশি পর্যটকদের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা এবং সার্কভুক্ত আটটি দেশের পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের জন্য ২০০ টাকা হারে নির্ধারিত রয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়কে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য প্রত্নসম্পদ। এসব প্রত্নসম্পদ পর্যটকদের এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও ইতিহাসের কথা জানান দিচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে কুমিল্লা অঞ্চল শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ।