শাহরিয়ার আবেদীন পড়েন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। গত ৯৮ ঘণ্টা ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে শরীরে চারটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
প্রথম দিকে শরীরে তেমন সমস্যা না হলেও গতকাল শনিবার থেকে নানা শারীরিক কষ্টে ভুগছেন তিনি। দুই ঘণ্টা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে হয়েছে। তবে লক্ষ্য অর্জিত হবেই, এমন মনোবলে অটুট আছেন তিনি।
শুধু শাহরিয়ার আবেদীন নন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষার্থী দাবি আদায়ে গত বুধবার বেলা ৩টার দিকে অনশন শুরু করেন। এর মধ্যে একজন বাবার অসুস্থতার কারণে বাড়িতে চলে যান। এর পর থেকে ২৩ জন অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ রোববার বিকেল ৫টার দিকে অনশনের ৯৮ ঘণ্টা পার হলো।
শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, দীর্ঘ সময় তিনি অনশনে থাকায় তাঁর মা-বাবা তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। মায়ের শারীরিক অবস্থা ভালো না। তিনি দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত তাঁর খোঁজ নিচ্ছেন। দীর্ঘ ৯৮ ঘণ্টা অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে কেটেছে। অনশনের সময় পার করার জন্য কয়েকটি বই সঙ্গে নিয়েছিলেন। কিন্তু মনোযোগ দিতে না পারায় সেগুলো তেমন পড়া হয়নি। মুখে কোনো খাবার না খাওয়ায় রক্তচাপ কমে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এমন পরিস্থিতির পরও উপাচার্য নিজের চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন। তাঁর কাছে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্য নেই!
অনশনরত আরেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘প্রথম থেকেই দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। তবে সত্য ও ন্যায়ের আন্দোলনের পথ থেকে সরে দাঁড়াইনি।’ অনশন শুরুর পর ৯৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। তবে শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল তিনি, পাশাপাশি পেট ও প্রচণ্ড মাথাব্যথায় ভুগছেন। অনশনকালে তিনি ‘বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর’ বইটি পড়া শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছেন না বলে জানালেন।
আবদুল্লাহ আল গালিবের প্রত্যাশা, ‘দ্রুতই উপাচার্য পদত্যাগ করবেন। আমরা রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হয়েছিলাম। একমাত্র তিনিই পারেন উপাচার্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা আশাবাদী। তিনি তাঁর দায়িত্বের জায়গা থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র জাহেদুল ইসলামও গত ৯৮ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, অনশনকালে তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর জন্য ইনহেলার নিতে হয়েছে। এ ছাড়া শরীরিক দুর্বলতাও আছে। তাঁর শরীরে চারটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল রাত ১১টার দিকে গণ–অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সামিউল এহসান শাফিন। তিনি বলেন, ‘অনশনের প্রায় ১৫ ঘণ্টা পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে মাথা ঘুরছে। শরীর দুর্বল লাগছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রাতের দিকে স্যালাইন দেওয়া হবে।’
অনশনকারীদের চিকিৎসক দলের প্রধান সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মো. নাজমুল হাসান বলেন, অনশনকারীদের অনশনের দীর্ঘ ৯৮ ঘণ্টা পার হয়েছে। অনশনকারীদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মুখে এখন পর্যন্ত কেউই খাবার গ্রহণ করেননি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাঁদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হবে।
আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়।
পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।